আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

Dia.jpg

সব রোগের আঁতুড় ঘর ডায়াবেটিস

মেইল ডেস্ক ।।

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হচ্ছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা অনেক বেশি। নগরায়ণের কারণে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছেই। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের বাণী ‘আমাদেরকে সেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ’ মূলনীতিকে ধারণ করে মানুষকে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সচেতন করার জন্য সমিতি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই উভয়কেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে নিজেকে সুরক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস হলেও সুস্থ থাকা যায়, আর নিয়ম না মানলে এটি প্রাণঘাতী। সবাইকে নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

কারন ডায়াবেটিস সব রোগের ‘মা’। দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস হলো সারা জীবনের রোগ। এক বার হলে তা কখনো সারে না। কিন্তু এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ডায়াবেটিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলে একে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই উভয়কেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে হবে এবং নিজেকে সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস হলে নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকা যায়, আর নিয়ম না মানলে এটি প্রাণঘাতী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। কাজেই যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এই বিষয়গুলো জানতে পারেন তাহলে তারা সচেতন হয়ে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারবেন। অন্যদিকে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে। কাজেই তারা যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো জানতে পারেন (যেমন—নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা) তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারবেন।

সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী রোগ যা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সে সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান ও তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায় ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক ৭ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ (প্রতি ১০ জনে এক জন) সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ দশমিক ৩ কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ দশমিক ৩ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ কোটি মানুষ (প্রতি দুই জনে এক জন) জানেন না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত চার জনের মধ্যে তিন জনেরও বেশি লোক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করেন। প্রায় ২ কোটি মহিলা (প্রতি ছয় জনে এক জন) গর্ভাবস্থায় হাইপার-গ্লাইসেমিয়ায় (উচ্চ রক্তের গ্লুকোজ) আক্রান্ত হন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস ১২ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোর (০-১৯ বছর) টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালে বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষের ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় ডায়াবেটিসের কারণে যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ৯%।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডায়াবেটিস সব রোগের ‘মা’। তবে স্বাস্থ্য সচেতন হলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে।

এদিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আজ বেলা ৩টায় এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top