নোয়াখালী প্রতিনিধি ।।
করোনা মহামারি, বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে বৃহত্তর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী, মুছাপুর, চরফকিরার গুচ্ছগ্রাম, চরপার্বতী, হাতিয়ায়, ফেনী জেলার সোনাগাজীর চরদরবেশ লক্ষীপুরের রামগতি, কমলনগর, চরকালকিনিসহ অনেক মেঘনা-ছোট ফেনী ও বমনী নদীর ভাঙনে চাষের জমি বসতভিটা হারানোর ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষেরা। নদীতে বসতঘর বিলীনের পর গবাদিপশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এছাড়াও ফেনীর ছাগলনাইয়া ও পরশুরামের প্রায় ১৫টি গ্রাম পাহাড়ী বন্যায় মানুষ গৃহ বন্ধী।
মেঘনা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারানোর পর গবাদিপশু নিয়ে বাঁধে ও বড় সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে কয়েকটি পরিবার। মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে অনেকের বসতভিটা একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েকজনের বসতভিটার বেশির ভাগ অংশ নদীগর্ভে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ঘর ও ঘরের মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ মালামাল ও ঘর—কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। আশ্রয় নিয়েছেন সড়ক ও বাঁধের ওপর।
আজ বাদে কাল ঈদ। ঈদ ঘিরে অনেকের মনে আনন্দ থাকলেও তাঁদের মনে সীমাহীন কষ্ট। তারা রামগতি উপজেলার নদীভাঙনকবলিত গ্রামের মানুষ। গত সাপ্তাহে মেঘনার তীব্র ভাঙনে এই গ্রামের আড়াই শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে গ্রামের নদীভাঙনকবলিত স্কুল, মসজিদ, বসতঘর ভিটিমাটি হারিয়েছেন এমন একজনের সাথে কথা হয়। নদী ভাঙনে ঘরহারার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে তিনি। বললেন, ভাঙন শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে মেলা বাড়ি ডুইব্যা গেলো। কাইন্দাকাইট্যা বাড়িঘর থুইয়া মানুষগুলা দোড়ায়া পালাইছে। ওই দেখাহে আমরাও সবকিছু হরাইব্যর পাইরল্যম না। পানি আর নদীর হাতে (সঙ্গে) যুদ্ধ কইরা কিছু মালামাল টানে তুইলযা নিয়া কোন রকমে ওয়াপদার উপর আচি।’
ঈদের বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহীন মানুষগুলো বলে, ‘আমাগোর (আমাদের) কোন ঈদ নাই, বাড়িঘর নাই, আশ্রয় নাই, সংসার চলবো কী দিযা তারই বন্দোবস্ত নাই, আবার ঈদ। মেঘনায় সব নিয়া গেছে। অহন আমরা নিঃস্ব। এই বাড়িঘর আমার বাপ দাদার। এই প্রথম আমার বাড়ি নদীতে বাঙল। আগের কালে মুরুব্বিরা কইছে আগুনে পুইড়লে তা-ও বিটামাটি (ভিটামাটি) থুইয় যায়, মেঘনার থাবায় কিচ্ছু থাহে না—কতাডো (কথাগুলো) এবার হাড়ে হাড়ে টের পাইলাম।’