মোহাম্মদ মকছুদের রহমন মানিক ও বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।।
জাতীয় পাক্ষিক নোয়াখালী মেইল ও www.noakhalimail24.com এ আমরা নোয়াখালীর উপকূলে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের নিউজের পর উপকূলের জেলা নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পূর্বের নিউজ টি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
মাননীয় মন্ত্রী আমদের নিউজের গুরুত্ব দিয়ে অবশেষে নোয়াখালীর উপকূলে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের আধা সরকারী অনুরোধ জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে। উপকূলের জেলা নোয়াখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের সকল সম্ভবনা বিদ্যমান রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা উপকূলবর্তী সন্দ্বীপ চ্যানেলের আওতাভুক্ত এলাকায় সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। নৌ-পরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নৌ-প্রতিমন্ত্রী বরাবর একটা ডিও লেটার দিয়েছেন। এটার বিস্তারিত আমরা বলতে পারছি না। তবে ওই অঞ্চলে সমুদ্রবন্দর হওয়া উচিত বলে তারা মনে করছেন। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। আমরা বিষয়টি প্রসেস করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।
ডিও লেটারে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফেনী জেলার সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ সমুদ্র উপকূলবর্তী উপজেলা। বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ দিয়ে ছোট ও বড় ফেনী নদী মেঘনা হয়ে ভোলা জেলার দিকে প্রবহমান। বিআইডব্লিউটিএর নদী জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে নদী দেড় হাজার মিটার থেকে ২ হাজার ৩০০ মিটার প্রস্থ, এখানে গভীরতা ৭-৮-১০-১২ মিটার।
শীতকালেও কোথাও কোথাও ১৪ মিটার পানি থাকে। এখানে নদী চওড়া হওয়ায় ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার লম্বা দুটি জাহাজ পাশাপাশি অনায়াসেই চলাচল করতে পারবে এবং কর্ণফুলী নদীর মতো এখানে প্রতি বছর নদী ড্রেজিংও করতে হবে না”
উল্লেখ্য, সরকারের সোনাগাজী-মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর বা এর সন্নিকটে একটি সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। অতি সম্প্রতি সরকার কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাগাজীতে প্রায় দশ হাজার ভূমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাগাজীর এ অংশে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন হলে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। আর বাংলাদেশের তুন সম্ভবনর দ্বার উম্মেচিত হবে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের প্রস্তাব করায় নোয়াখালীর গর্ব মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ধন্যবাদ। জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিলের পর ওবায়দুল কাদের এমপিই প্রথম ব্যক্তি যিনি নোয়াখালীর সম্ভবনাকে কাজে লাগানোর চিন্তা মাথায় নিয়েছেন। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন হলে নোয়খালী তথা দক্ষিণ-পূর্ব ঞ্চলের মানুষর কাছে হাজার বছর অমর হয়ে থাকবেন ওবায়দুল কাদের এমপি।
চিঠিতে জনস্বার্থে বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছাকাছি সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি সমুদ্রবন্দর হলো চট্টগ্রাম ও মোংলা। সর্বশেষ পটুয়াখালীতে চালু হয়েছে পায়রা বন্দর। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে সোনাদিয়ায় আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে।
এর আগে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজেও নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, নোয়াখালীতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। নোয়াখালীর ওই চ্যানেলে বন্দর করা হলে ঢাকার পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল আরো গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, নোয়াখালীতে একটি বিমানবন্দরও হবে। এজন্য আগেই জায়গা চূড়ান্ত হয়ে আছে। এছাড়া সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও হবে। আর এখানে যেহেতু সমুদ্রের চ্যানেল রয়েছে, তাই পোর্ট করা গেলে তো আরো বেশি কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-কারখানা নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ওই অঞ্চলে এখনো তেমন শিল্পায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন জেলার জনপ্রতিনিধিরা।
তারা বলেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নতুন করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। ব্রিটিশ আমলেও এ অঞ্চলে যোগিদিয়াতে সমুদ্রবন্দর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। এছাড়া এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
আমরা আমাদের নোয়াখালী মেইল ও www.noakhalimail24.com এর পূর্বের নিউজে এ সমস্ত দাবি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে এভাবে তুলে ধরেছি।
সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জে নতুন করে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লার বাসিন্দারা এর সুফল পাবেন। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে মালামাল পরিবহনের সময়ও কমে যাবে। ফলে এ অঞ্চলের শিল্পায়নও নতুন করে গতি পাবে। শিল্পপতিদের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়ক হবে।