কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮৯ কেন্দ্র

Cumilla-city.jpg

ভোটগ্রহণে থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কুমিল্লা থেকে সীমান্ত চৌধুরী ।।

আগামী ১৫ জুন কুসিক নির্বাচনে সদর ও দক্ষিণ উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট নিয়ে প্রার্থীদের নানা শঙ্কার কথা থাকলেও এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন থেকে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। ১০৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, সাতটি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৯টি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এর মধ্যে সদর দক্ষিণ উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডের (১৯ থেকে ২৭ নম্বর) ৩২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সব কেন্দ্রই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। অবশিষ্ট সব কেন্দ্র সদর উপজেলায়। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্য, ২০ জন পুরুষ ও মহিলা আনসার, কেন্দ্রের বাইরে পুলিশের একটি মোবাইল টিম, প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য বাইরে একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে মোবাইল টিম।

এছাড়াও নির্দিষ্ট কেন্দ্র এলাকায় থাকবে বিজিবি ও র্যাবের টহল টিম। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নজরদারি থাকবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। কুসিক নির্বাচনে সব মিলিয়ে অন্তত ছয় সহস্র্রাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও কর্মকর্তা মাঠে থাকবে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কশিন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুসিকের দুই উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯ কেন্দ্রে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন, আরআরএফ সদস্য ও আনসার মোতায়েন থাকবে।

এছাড়াও কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। সব মিলিয়ে ভোটের দিন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো কুসিক নগরী। মাঠে মোতায়েন থাকবে অন্তত ছয় হাজারেরও অধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য।

এছাড়াও নগরীর প্রতিটি প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে থাকবে চেকপোস্ট। আইনশৃখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে থাকবে বুলেট প্রুপ-আরমোরেড পার্সোনাল ক্যারিয়ার-এপিসি ও জলকামান গাড়ি। জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ভোটের দিন কুসিক এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনি পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে নগরীতে প্রবেশ পথে মোতায়েন থাকবে পুলিশের ৭৫টি চেকপোস্ট ও ১০টি পিকেট টিম।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, কুসিকের ভোট অধিক গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশের বাইরেও আশপাশের জেলা থেকে আনা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। এ ছাড়াও ঢাকা থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন ও চট্টগ্রাম থেকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স-আরআরএফ সদস্য আনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভোটের দিন রাস্তায় থাকবে এপিসি ও জলকামান গাড়ি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি টহল দিচ্ছে।

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। এ জন্য কুসিক এলাকায় র্যাবের অন্তত ২৭টিম কাজ করবে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন কুসিকের প্রার্থী ও ভোটাররা। তাই আমরা এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আশা করি এ ভোট হবে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর।

তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। ২৭টি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট ও ১২ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।’

রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘কুসিক নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে স্থানীয় প্রশাসন সব দিক থেকে সহায়তা দিচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের কোনো শঙ্কিত হওয়ার কারণ দেখছি না, আশা করি ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে।’

প্রার্থীদের গণসংযোগ-পথসভা : আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নগরীর মোগলটুলী, বাগিচাগাঁও ও ছোটরা এলাকায় গণসংযোগ করেন এবং মনোহরপুর, গোবিন্দপুর, গন্ধমতি, জয়পুর ও সালমানপুর এলাকায় পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন। এই প্রার্থীর স্ত্রী ফারহানা হক শিল্পী নগরীর মনোহরপুর এলাকায় উঠান বৈঠক করে নৌকার বিজয়ের জন্য ভোট চেয়েছেন।

অপরদিকে, সদ্য সাবেক মেয়র ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু চৌয়ারা, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন এবং নগরীর উত্তর রামপুরসহ কয়েকটি এলাকায় উঠান বৈঠক ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলী নারী কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নগরীর কাশারিপট্টি ও বালুধুম এলাকায় উঠান বৈঠক করে তার স্বামীর জন্য ভোট চান।

এছাড়া মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর মাটিয়ারা, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, উলুরচর, ধনাইতরী, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top