নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
করোনার কারণে এ বছরের পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের পর এবার অষ্টমের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা এ বছর হবে না-বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) এমন ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কেন্দ্রীয় পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে। জানা গেছে, অন্যান্য শ্রেণীতেও এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প উপায়ে পরবর্তী শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করার চিন্তাভাবনা চলছে। এদিকে কওমি মাদ্রাসা বাদে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীর বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার কারণে শিক্ষা সঙ্কটে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যা কিছু করছি সব তোমাদের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। এখন করোনাকাল চলছে। তোমরা স্কুল করতে পারছ না। তারপরও বই আছে। তোমরা ভাল করে পড়াশোনা করো। ফাইনাল পরীক্ষা হয়ত হবে না, প্রমোশনটা দিয়ে পড়াশোনা তো চালিয়ে যেতে হবে। আমরা দেখছি কী করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে ছেলেমেয়েরা আজ স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে তারা লেখাপড়া করতে পারছে না। (এখন) অনলাইনে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে টেলিভিশনে। তোমরা সেখানে মনোযোগ দেবে। করোনাকালে প্রচুর সময় পাচ্ছ। তোমাদের পড়ার সুযোগ হয়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, সারাবিশ্বেই এ অবস্থা।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, করোনার কারণে এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের সমস্যা তুলে ধরে এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা এ বছর না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবারই এক সভায় এইচএসসি পরীক্ষা ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে তা জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি।
মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং অধীনস্থ বিভিন্ন দফতর, সংস্থার প্রধানদের অংশগ্রহণে করোনাকালীন ও করোনাপরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এক অনলাইন সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খানসহ কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় সেক্ষেত্রে এইচএসসি পরীক্ষা ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে তা নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিনি করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্দেশ দেন। ওই সভাতেই করোনার কারণে কওমি মাদ্রাসা ছাড়া দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয় মন্ত্রণালয়। এর আগে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অধীন প্রতিষ্ঠানে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থানের নির্দেশনা দিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনসহ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধের সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের বাসস্থানে অবস্থানের বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করবেন। স্থানীয় প্রশাসন তা নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করবেন। শিক্ষার্থীরা যাতে বাসস্থানে অবস্থান করে নিজ নিজ পাঠ্যবই অধ্যয়ন করে সে বিষয়টি প্রধান শিক্ষকরা তাদের সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন।