এ কে আজাদ। ফাইল ছবি
এ কে আজাদ ।।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শেষ পর্যন্ত বাড়তি যে পাল্টা শুল্ক প্রস্তাব করেছে, দর-কষাকষির মাধ্যমে সেটি কমাতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে। যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পণ্য রপ্তানির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সরকারের দিক থেকে কিছু শক্ত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব। প্রথমত, আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপকভাবে তুলা আমদানির উদ্যোগ নিতে পারি। পাশাপাশি এলএনজি, স্টিল মেটালসহ আরও বেশ কিছু পণ্য আমদানি বাড়াতে পারি।
আমাদের জানামতে, সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাও চলমান রয়েছে।
আজ ৯ জুলাই এ নিয়ে বৈঠক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর বা ইউএসটিআরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সরকার মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির জন্য একটি গুদাম বা ওয়্যারহাউস তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারের দিক থেকে যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটিকে লাভজনক হিসেবে উত্থাপন করা সম্ভব হয়, তাতে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ওয়্যারহাউস তৈরি করে সেটিকে বাংলাদেশের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন দেশের জন্যও ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করার মাধ্যমেও বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করি। যার মধ্যে বড় অংশই তৈরি পোশাক। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করি। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলারের। আমি মনে করি, নতুন করে কিছু পণ্য আমদানির উদ্যোগ ও বিদ্যমান পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেওয়া হলে এ বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে দর-কষাকষির সরকারি এই উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ কম। ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য আমদানি করতে পারে এবং কীভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও বেশি আলাপ-আলোচনা করা হলে তাতে নতুন নতুন অনেক পথ হয়তো বেরিয়ে আসত। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষিতে ইন্দোনেশিয়া দেশটির একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকেও যুক্ত করেছে। তাতে তারা ভালো সুফল পেয়েছে। আমাদের দেশেও যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করছে তাদের সরকার কাজে লাগাতে পারত। আবার যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে এ দেশের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে, তাদেরও লবিস্ট হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি পাল্টা শুল্কের প্রস্তাবের পর দেশটির অনেক ক্রেতার সঙ্গে আমাদের বাড়তি শুল্ক ভাগাভাগি করতে হয়েছে। এখন ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এখন যদি আমরা দর-কষাকষিতে ব্যর্থ হই তাহলে এ দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে। ট্রাম্প এখনো ভারত ও পাকিস্তানের জন্য পাল্টা শুল্ক কত হবে সেই ঘোষণা দেননি। আমাদের দুশ্চিন্তার বড় কারণ এখন এ দুটি দেশের শুল্কহার। ভিয়েতনাম আমাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হবে না।
ভিয়েতনাম যেসব পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে সেগুলো আমাদের সঙ্গে মেলে না। এখন যদি বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের শুল্কহার কম হয়, তাহলে এ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে আমাদের বড় প্রতিযোগী হয়ে উঠবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রয়াদেশ দেশ দুটিতে স্থানান্তরিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক আমদানি করে, সেই ক্রয়াদেশ কয়েকটি দেশে স্থানান্তর করা খুব কঠিন কাজ নয়। তাই আমাদের এখন যেকোনো মূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশটির সরকারের সঙ্গে সফলতার সঙ্গে দর-কষাকষি সম্পন্ন করতে হবে।
লেখাক -এ কে আজাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হা-মীম গ্রুপ।