নামেই উম্মুক্ত! উপজেলা নির্বাচনে ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় দায়িত্বশীলরা

Vote-Box.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রাম বিভাগের সব কয়টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের অনুগত প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কাজ করছেন। অনেক এমপি দলের সভাপতি সেক্রেটারী নিজস্ব প্রচন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজেদের ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদেরও নির্দেশনা দিচ্ছেন এমনকি দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বাধ্য করছেন অনুগত প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে।

সংসদ সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। নোয়াখালীর অনেকে ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে না থাকলেও বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ভেতরে-ভেতরে কলকাঠি নাড়ছেন। নোয়াখালী সদর আসনের সূবর্ণচর উপজেলায় এমপি পুত্র দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ভোট করছে। হাতিয়া এমপি পুত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। সেনবাগেও এমপি পুত্র ভোট করছে। কোম্পানীগঞ্জে এমপি ছোট ভাই পৌর মেয়র ও দলের সভাপতি স্বয়ং দলের সেক্রেটারীর বিপক্ষে অনুগত প্রার্থীর পক্ষে ভোট করছেন।

এছাড়াও ফেনী ও লক্ষ্মীপর জেলায়ও একই অবস্থা। ফেনীর দাগনভূঞাতওে সংসদ সদস্যের প্রচন্দের একক প্রার্থী হতে পারে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিজেদের অনুগত প্রার্থী রয়েছে। সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে মাঠে নেই। কিন্তু তাঁরা নিজ নিজ অনুগত প্রার্থীকে জেতাতে তাদের অনুসারীদের ভোটের মাঠে নামতে বাধ্য করছে।

৮ মে প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালীর সূবর্ণ চর, হাতিয়া, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই উপজেলায় এবং ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের চার উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায়।

ভোট হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের সব উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। যদিও এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রার্থীদের দলীয় প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা একই দলের বিভিন্ন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

সন্দ্বীপ উপজেলায়ও সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুদ্দিন মিশন এক বছর আগে উপনির্বাচনের মাধ্যমে ওই চেয়ারে বসেছিলেন। তখন সংসদ সদস্য তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

মাঈনুদ্দিন মিশনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন মগধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা নিজেকে সংসদ সদস্যের প্রার্থী হিসেবে দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তবে মাঈনুদ্দিন মিশন বলেন, ‘এমপি সাহেব (মাহফুজুর রহমান) আমার বিরুদ্ধে। গতবার আমার পক্ষে ছিলেন। কেন তিনি বিরুদ্ধে গেলেন, তাও জানি না। তিনি ফোনে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান–মেম্বারদের বলে দিচ্ছেন।’

সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গতবার মাঈনুদ্দিন মিশন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। দলের সবাই তাঁর পক্ষ নিয়েছিলেন। এবার তো প্রতীক ছাড়া নির্বাচন। এখানে কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। সন্দ্বীপে চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন জামসেদ, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ ও শেখ মুহাম্মদ জুয়েল।

মিরসরাই উপজেলায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও একই কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এনায়েত হোসেনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আতাউর রহমান। তবে এবার তিনি মোশাররফ হোসেন কিংবা তার ছেলে সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের সমর্থন পাচ্ছেন না। তারা গোপনে আরেক প্রার্থী এনায়েত হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানকে ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিরসরাইয়ে চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থীও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তাঁরা হলেন ফেরদৌস হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তফা ও উত্তম কুমার শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top