এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চালুর উদ্যোগ

Rail-Met.jpg

নিজস্ব প্রতিনিধি ।।

গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করে সরকার। সর্বশেষ মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামুলক চলেছে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিকভাব উদ্বোধনীর পর মতিঝিল পর্যন্তই চলবে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ–চালিত ট্রেন। এবার বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চালু করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংস্থাটি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর অংশে এ ট্রেন চালুর সমীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৬ জুলাই রোববার রেলভবনে তুমাস তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকটিং কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি সই হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩৭ কিলোমিটার। এর সঙ্গে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের আরও প্রায় ১১ কিলোমিটার রেলপথ বিদ্যুৎ–চালিত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।

চুক্তি অনুযায়ী, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী-জয়দেবপুরের মধ্যে বিদ্যমান রেলপথটি বিদ্যুৎ–চালিত ব্যবস্থায় রূপান্তরের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করবে। পাশাপাশি প্রকল্পটি প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক ও আর্থিক এবং পরিবেশ ও সামাজিকভাবে কতটা কার্যকর, এ নিয়ে সমীক্ষা চালাবে।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ–চালিত রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত প্রকৌশলগত নকশা প্রণয়নও করে দেবে তুমাস তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারিং। এসব কাজের জন্য ১২ মাস সময় পাচ্ছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে।

রেলওয়ের প্রধান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) হাবিবুর রহমান ও তুমাস তুর্কির ইসমাইল হেদার্লি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেল যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে রেলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইউরোপসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে রেলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। কার্বন নির্গমন কম হওয়ায় এটি পরিবেশবান্ধব।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা ট্রেনগুলো পরিচালনা করতে প্রায় ৩৫ শতাংশ খরচ কমবে। যাতায়াতে সময় কমবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমবে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসবের পাশাপাশি প্রকল্পটি রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পটির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নারায়ণগঞ্জ। অন্যদিকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ পরিবহন হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রামের বিদ্যমান লাইনটি বিদ্যুৎ–চালিত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করলে তা দেশের পরিবহনব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যে যাত্রী পরিবহন হয়, তার ৫৬ শতাংশই হয় রেলপথে।

বিপরীতে রেলপথে পণ্য পরিবহন হয় ২৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়কপথের ওপর চাপ কমিয়ে রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বাড়ানোর কথা বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top