কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি

PBD.jpg

১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা । ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার

মিরাজ মৃত্তিক ।।

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত করা হয়।

কে হচ্ছেন এবারের রাষ্ট্রপতি? এ নিয়েও যেমন চলছে আলোচনা, তেমনই এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে একজন প্রার্থীর কি কি যোগ্যতা থাকতে হয়, তা-ও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেননা এবারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অনেকের নাম আলোচনায় আসলেও তাদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

জানা গেছে, এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয়ে (প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে নির্ধারিত দিনে অফিস চলাকালে) মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

রাষ্ট্রপতি হতে হলে কি কি যোগ্যতা লাগে?
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো, এই নির্বাচনেও প্রার্থী হতে একটি সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। প্রার্থী হতে হলে সেসব বিষয়ে যোগ্যতা থাকাটা আবশ্যক। এসব যোগ্যতা না থাকলে অনেকেই প্রার্থী হতে পারবেন না। অথবা কেউ কেউ প্রার্থী হলেও তাদের প্রার্থীতা বা মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও যেসব যোগ্যতা কিংবা নিয়ম-নীতি অনুসরন করতে বলা হয়েছে, সেসব যোগ্যতা এবং নিয়ম-নীতি অনুসরন করেই একজন প্রার্থীকে তার প্রার্থীতা বা মনোয়নপত্র দাখিল করতে হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। এর আগে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপতি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, কেউই দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকতে পারেন না। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে তাঁর মেয়াদ। সংবিধান অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।

সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূণ্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে। তারই প্রেক্ষিতে আগামী ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকায় দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকেন রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রের অন্যসব ব্যক্তির উর্ধ্বে স্থান পান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দেশের আইন, শাষন এবং বিচার বিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধান হন। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কও তিনিই। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা যায় না। এছাড়া তাঁর গ্রেপ্তার বা কারাবাসের জন্য কোনো আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যায় না।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের আগে রাষ্ট্রপতি শাষিত শাষণ ব্যবস্থা থাকায় প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন। তবে বর্তমানে সেই ব্যবস্থা নেই। ২০১১ সালে সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর পর বর্তমানে সংসদে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির যে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে সংসদের কক্ষে। এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের মতো কাজ ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যোগ্যতা:
সংসদে জয়ী দলগুলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে। তবে যেহেতু সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশে এক দলের সাংসদ হয়ে অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, সেহেতু সাধারণত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হতে হলে তার প্রথম যোগ্যতা হলো, অবশ্যই তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হতে হবে বা সংসদ সদস্য হতে হবে। সংসদ সদস্য হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স নূন্যতম ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হতে হলে বয়স ২৫ বছর হলেই হবে না, বরং তার বয়স ৩৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। এছাড়া, মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর- তা থেকে অব্যহতি পাওয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক না হওয়া, ফৌজদারি অপরাধে ২ বছরের বেশি মেয়াদে সাজা ভোগ না করা এবং মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর অতিবাহিত হওয়া ইত্যাদি নানান শর্ত রয়েছে।

কেউ যদি কখনও অভিসংশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন, তাহলেও তিনি দ্বিতীয়বার আর রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়, তিনি সংসদ সদস্যের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি হলে দায়িত্বগ্রহণের দিন থেকে তাঁর আসন শূণ্য ঘোষণা করা হয়।

বঙ্গভবনের যাবার প্রস্তুতি শুরু ড. মসিউরের
অন্য কোন অঘটন না ঘটলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান হতে যাচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে যাওয়ার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন ড. মসিউর রহমান। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে ড. মসিউর রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তার শারীরিক কোন বড় ধরনের সমস্যা নেই বলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সাধারণত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা একটি বাধ্যবাধকতা। কারণে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবেন এমন ব্যক্তির শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। এর আগেও আর জিল্লুর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি হন তখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তত্ত্বাবধানে জিল্লুর রহমানের পরীক্ষা করা হয়েছিল। আব্দুল হামিদকেও রাষ্ট্রপতি করার আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। এবার মসিউর রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই ধারণা করা হচ্ছে তিনি হতে যাচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দার।

ড. মসিউর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করা হবে এ ব্যাপারে আরও কিছু সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি তার দাপ্তরিক কাজকর্ম ঘটিয়ে ফেলেছেন, কোন রকম কর্মসূচি তিনি গ্রহণ করছেন না। রাষ্ট্রপতি হবার প্রস্তুতি হিসেবে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য যে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের মেয়াদ আগামী এপ্রিলে শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে মেয়াদপূর্তির ৯০ দিনের মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ধারণা করা হচ্ছে যে, মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন শুধুমাত্র একটি মনোনয়নপত্র পড়বে। কারণ জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। ৩৪৩জন জাতীয় সংসদ সদস্যের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত। সে কারণে আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দিবে তিনি নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকবেন। এমন তথ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনোনয়ন বোর্ডের কমিটি রয়েছে, রয়েছে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কোনো মনোনয়ন বোর্ড নেই। গতবার আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের জন্য প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করেছিল। তার আগের বারের সময় (জিল্লুর রহমান) আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির বৈঠকের নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এবার নতুন রাষ্ট্রপতি কোন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত করা হবে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে যোগ্য বিবেচনা করবেন তাকেই যে দলের নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেনে নিবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আর এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হলো ড. মসিউর রহমান। সেটিও এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ড. মসিউর রহমান রাষ্ট্রপতি হবার বিষয়টি ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় মহলে জানাজানি হয়ে গেছে। আর সেকারণেই এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার অপেক্ষায় ড. মসিউর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top