লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে নেচে ছিলো আওয়ামী লীগ: ফখরুল

Fakrul-Bnp.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ,তোমাদের মনে থাকা উচিত যে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে মেরে তার ওপর তোমরা নেচে নেচে ১/১১ আনার ষড়যন্ত্রটা করেছিলে। আজকে আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, সংবিধানের কথা বলেন। এই সংবিধানকে তো শেষ করেছেন আপনারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হয়েছিলো আপনাদের দাবি। আপনারা ১৭৩দিন হরতাল করেছিলেন। তখন জাতীয় পার্টি-জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করে এমন অবস্থা তৈরি করলেন এক অচালাবস্থা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, জনগন এটা চায়।তখন তিনি পার্লামেন্ট ইলেকশন করে নতুন পার্লামেন্টে এক রাতে আমি সেই পার্লামেন্টের সদস্য ছিলাম এক রাত্রে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটা পাস করেছি। শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুর শহরে অদূরে ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ওই যে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করছে না যুব লীগের নামে। ওইখানে উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকী সংগ্রাম করছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্য।

এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। আর বলবে ভূতে মুখে রাম রাম। যারা গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিলো, যারা গণতন্ত্রকে চিবিয়ে খেয়ে ফেললো, যাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে যে, কোনো মানুষ ভোট দিতে পারবে না। জোর করে ভোট দেবে।তাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে গুম করা, খুন করা, হত্যা করা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া। তারা বলে তারা নাকী গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেবে।

তিনি বলেন, আপনি দয়া করে বলবেন, আপনার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কি, ডেফিনেশনটা কি? সেটা কি এই কথা যে, এটা- অন্য কোনো দলকে আামি কোনো কিছু করতে দেবো না।হায়রে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রের আওয়ামী লীগ।

ফরিদপুরের এই জনসমাবেশকে পন্ড করার জন্য, নতসাত করার জন্য তিনদিন আগে থেকে তাদের আজ্ঞাবহ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক ইউনিয়ন দিয়ে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।পথে পথে সিকিউরিটি চেক বসিয়েছে। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা আটকায়। জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাবেন। বলে যাওয়া যাবে না, রাস্তা বন্ধ আছে। বরিশালে আরো খারাপ কাজ করেছে। বরিশালে ট্রলারে করে মানুষজন যখন আসছিলো, সেই ট্রলার ফেলে দিয়ে লোকজনকে নদীতে ফেলে পিটিয়েছে। বাস থেকে নামিয়ে মেরেছে, ময়মনসিংহে একইভাবে গোলাগুলি করেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র।

ফখরুল বলেন, এতো ভয় কেনো? জনগন থেকে তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো। জনগনের সাথে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আজকে এদেশে আলেম-ওলামাদের পর্যন্ত তোমরা হয়রানি করছো। তোমরা তাদেরকে মিথ্যা মামলায় আসামী করে তাদেরকে জেলে পাঠাচ্ছো এবং তাদেরকে কোনো জামিনও দিচ্ছো না।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি গণতন্ত্রের মাতা, তার ৯ বছর দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রের চারণ কবির মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই নেত্রীকে তুমি মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে চার বছর ধরে বন্দি করে রেখেছো। অসুস্থ মানুষ, চিকিতসার জন্য বাইরে যেতে দাও না। ভয় কেনো? ভয় এজন্য যে, বেগম জিয়া তো হ্যামিলনের বংশীবাদক। উনি বেরুলে সেই বাঁশী যদি বাজাতে শুরু করেন তাহলে দেশের মানুষ সেই একাধারে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। ওই ভয়ে তোমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন পর্যন্ত দাও না যেটা উনার প্রাপ্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তোমরা ক্যাসিনো সম্রাটকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে দাও। সে এখন যুব লীগে মহাসমাবেশে সামনের সারিতে শেখ হাসিনার সা্থে বসে থাকে। কি দেশ আমাদের? যারা লুট করে, যারা মাফিয়া হিসেবে কাজ করে, যারা এদেশের সব কিছু ধবংস করে দেয়, তাদের জামিন হয়, তারা মুক্তি পায়।

অথচ গণতন্ত্রের জন্য যিনি ৯ বছর সংগ্রাম করলেন এবং যিনি জীবনের ৩৫টি বছর গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন তাকে তোমরা আটকিয়ে রেখে দাও। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে কতগুলো মিথ্যা মামলায় সাজিয়ে-গুছিয়ে তাকে সাজা দিয়ে বসে আছে। আরে ওই সাজা কি টিকবে? টিকে কখনো।মিথ্যা মামলায় সাজা টিকে কখনো। কেউ কাউকে আটকিয়ে রাখতে পেরেছে। তাদের তো নিজের ইতিহাসটা ভালো করে পড়া উচিত। এভাবে কাউকে আটকিয়ে রাখা যায় না। আর জোর করে, জবরদস্তি করে কোনো দিন মানুষের ন্যায়ের সংগ্রামকে বন্ধ করে রাখা যায় না। ফেরাউন পারিনি, নমরুদ পারেনি, হিটলার পারেনি, মুসলিন পারেনি।আমাদের দেশে আইয়ুব খানও পারিনি। আপনারাও কিন্তু পারেন নাই। ভুলে যান কেনো? একনায়কতন্ত্র করে, কর্তৃত্ববাদী শাসন চালিয়ে, জোর করে, মানুষকে গুম করে, খুন করে আপনারা কেউ রেহাই পাবেন না। সরকার আবারো অতীতের মতো মিথ্যা মামলা দায়ের কৌশল নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

এখন শুরু করেছে নতুন কায়দা। সেই কায়দা কি? মামলা শুরু করেছে। গত কয়েকদিন আগে নরসিংদীতে দেখলাম- একজন আওয়ামী লীগের লোককে ধরেছে। তার বাড়িতে দেশী বোমা ও বারুদ পেয়েছে।ওকে ধরেছে। আর মামলা দিয়েছে আমাদের যুব দলের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিসহ ৭জনের বিরুদ্ধে। এটা নতুন কৌশল।

রাজবাড়ী মহিলা দলের নেত্রী সোনিয়া আখতার স্মৃতিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার অপরাধ কী? তিনি একটা পোস্টে শেয়ার করেছিলেন। রাত্রি ২টার সময়ে তার দুই ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাদেরকে অসহায় অবস্থায় রেখে তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সে নাকী প্রধানমন্ত্রীকে কটু বাক্য বলেছেন।

সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এই যারা রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান থাকেন তাদের বিরুদ্ধে কার্টুন আঁকা হয়, তাদের বিরুদ্ধে নাটক হয়,তাদের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলে।সেখানে তাকে গ্রেফতার করা হয় না, তাকে শাস্তি দেয়া হয় না। ও্ইটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের বিউটি, এটাই সহশীলতা। এদেশে সহনশীলতা নাই। ওরা মনে করে দেশটা তাদের্ বাপের দেশ, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে সাধারণ মানুষ আমরা সব চাকর-বাকর, ক্রীতদাস আর কি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top