মুসলিম বিশ্বের দীনতা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

NM24-2.jpg

গোলাম কিবরিয়া ।।

ক’দিন আগে কথা হচ্ছিল,মুসলিম বিশ্বের মানবাধিকার বিষয়ে। প্রশ্ন ছিলো, বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে তারা কতটুকু দায়িত্বশীল আচরণ করছে? মুসলিম বিশ্বে ধনী রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরব,কুয়েত,আরব আমিরাত, ইরান বিশেষ স্থানে আছে।কিন্তু আমরা দেখি,এরা বিশ্বের নির্যাতিত, উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে অনাগ্রহী এবং বরাবরের মতো ব্যর্থ।

বিশ্বের বহু দেশের শ্রমিক আরব দেশসমূহে যায়। অনেকেই অভিযোগ করেন,মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সাথে চতুরতার আশ্রয় নেন,চুক্তি অনুযায়ী বেতন প্রদান করে না; একসময়ে তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করে দেয়। এজন্য তারা বিচার প্রার্থী হওয়ার সুযোগও পান না।কারণ, এসকল দেশে স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন নেই। যাদের কাছে নির্যাতনের শিকার মানুষ সাহায্য চাইতে পারে।অন্যদিকে, নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।প্রায়ই পত্র- পত্রিকায় এসকল সংবাদ দেখা যায়।

আরব বিশ্বের প্রচুর অর্থ আছে। তারা অস্ত্র কিনে। কিন্তু তারা মৌলিক গবেষণায় অর্থ ব্যয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যান্য মুসলিম দেশ (বাংলাদেশ সহ) মৌলিক গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে।করোনা টীকা উদ্ভাবনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি গবেষকদের অবহেলা আমাদেরকে আহত করেছে।যাদের যোগ্যতা নেই,তারাই উদ্ভাবনের মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করেছে।মাঝপথে ব্যবসায়ীদের একের কাটা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বরাদ্ধকৃত টাকা খরচ হয়না। কারণ, অযোগ্যরা শিক্ষক হচ্ছেন; তারাতো গবেষণা করার কথা নয়। এজন্য শিক্ষক নির্বাচনে পরীক্ষার ফলাফল না দেখে প্রার্থীর উদ্ভাবনী শক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।দলবাজি আর গলাবাজির উর্ধ্বে উঠতে হবে।

মুসলিম বিশ্ব বিশ্বের মেধাবীদের টানতে পারেনা।মেধাবী, ভিন্ন পথ ও মতের মানুষ এখানে নিগৃহীত হয় । স্বাধীন চিন্তার বিকাশে তাদের আগ্রহ নেই। এমনটি হলে তারা কিয়ামত পর্যন্ত বৃহৎ শক্তির ইশারায় চলতে বাধ্য হবে।আমরা দেখবো, আরব বিশ্বের তেলের প্রভাব ভাটার দিকে গেলে তাদের চলার গতি কাদা মাটিতে আটকে যাবে।

আরব দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে সর্বজনীন মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।তারা যদি আগামী দিনগুলোতে নিজেদেরকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়,তাহলে তারা অবশ্যই মজলুমের আশ্রয়দাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে।অন্যথায়,তারা কালের অতলে অচিরেই হারিয়ে যাবে।

আরব বিশ্ব মসজিদ নির্মানে টাকা দেয়। ইসলামের প্রচারে টাকা দেয়। কিন্তু ইসলামের সত্যকে আড়ালে রেখে দিতেই অভ্যস্ত।
বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থীর আশ্রয়দাতা। কিন্তু বিত্তবান আরব বিশ্ব এ-ই সংকট নিয়ে কানে তুলো দেয়,মুখ এটে দেয়। কোন জাতির মজলুমের পক্ষে থাকার সৎ সাহস যদি না থাকে, সেই জাতি অচিরেই মজলুমের দলভুক্ত হবে।

লেখক  গোলাম কিবরিয়া একজন শিক্ষক ও গবেষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top