গ্যাস সংকটে চরম ভোগান্তিতে আবাসিক গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীরা

Gas.jpg

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

সময়মতো খাবার প্রস্তুত কিংবা বাচ্চাদের স্কুলের টিফিন, স্বামীর অফিসের খাবার তৈরি করতে বেশ বেগ পোহাতে হয় । ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকার অনেক গৃহিণী এমনটাই জানান। কোনোদিন খাবার দিতে পারেন; আবার কোনোদিন দিতে পারেন না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফজরের আজানের সময় থেকেই রান্নাবান্নার কাজ শুরু করেন অনেকে। কেউ কেউ মধ্যরাতেই চুলায় পাতিল বাসান। কারণ, খুব সকাল সকাল চলে যায় গ্যাস।

দেশে নাগরিক ভোগান্তিতে লোডশেডিংয়ের সাথে এবার যুক্ত হলো তীব্র গ্যাস সংকট। রাজধানী ও তার আশেপাশের জেলাগুলোতে এ সংকট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। সকাল ৭টার পর আর গ্যাস থাকে না চুলায়। রান্নাবান্নায় চরম অসুবিধায় পড়তে হয় গৃহিণীদের।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন আবাসিক গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারীরা। রান্নার সময় চুলায় মিলছে না পর্যাপ্ত গ্যাস। বিকল্প হিসেবে গৃহিণীদের কেউ কেউ লাকড়ির চুলা, এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করলেও কর্মজীবীরা ঝুঁকছেন ইলেকট্রিক পণ্যের দিকে। গ্যাসের চুলার বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন রাইস কুকার এবং বৈদ্যুতিক চুলা। ফলে বাড়ছে বিদ্যুতের ব্যবহার।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আবাসিক গ্যাস সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অনেক দিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকরা। বাসাবাড়িতে চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস। এতে সংসারে খরচ বাড়ছে।

এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ছোট-বড় কারখানা বন্ধও হয়ে গেছে গ্যাস সংকটের কারণে।

অনেক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট বিদ্যমান। খুব ভোরে গ্যাস থাকলেও বুকাজের বুয়ারা এত সকালে আসতে পারেন না। ফলে রান্নাবান্নার কাজে বেশ বেগ পোহাতে হয়। তিতাস গ্যাস ব্যবহারকারীরা জানান, লাইনের গ্যাস নির্ধারিত ১০৮০ টাকার সাথে লাইনের সংকটের কারণে প্রায় প্রতি মাসেই ১৪-১৫শ টাকা অতিরিক্ত খরচ করে এলপিজি দিয়ে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেন, আবাসিক খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের মাসিক বিল এক চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে এক হাজার ৮০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এদিকে গ্যাস থাকুক আর না থাকুক, মাস শেষে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তারা দাবি করেন, লাইনের গ্যাস মিটার কন্ট্রোল হলে যা খরচ তা-ই বিল দিতে হতো। মিটার না থাকায় এখন গ্যাস ব্যবহার না করেও পুরো টাকাই দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

এদিকে সরকারের তরফ থেকে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একগাদা নিয়ম জারি করলেও সমন্বয়ের অভাবে ফলাফল শূন্যপ্রায়। গ্যাস সংকটের কারণে ইলেকট্রিক কুকারের সাহায্যে দেদার রান্নাবান্না চলছে। লোডশেডিংসহ সাশ্রয়ের নানা নিয়ম থাকলেও স্রোতের গতিতে বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে জেনারেটর আর পাম্পে। এবার যুক্ত হলো রান্নার কাজেও।

ধরুন বিদ্যুতের সাহায্যে রান্না করবেন। বিদ্যুতের যে দাম, এতেও পোষাবে না গ্রাহকের। বিকল্প হিসেবে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে চান। সেখানেও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানো হয়েছে। ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ১৬ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে ভোক্তাদের ১২ কেজির প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার এখন থেকে ১২৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বহু ভোক্তার দাবি সরকার যতবারই সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বা কমিয়েছে, কোনোটারই সুযোগ পান না ভোক্তারা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামে কেউই বিক্রি করছেন না।

তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা, সে পরিমাণ গ্যাস আমরা পাচ্ছি না। মূলত সরবরাহ না থাকায় গ্যাসের এই সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাসের সংকট চলছে। রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ বসুন্ধরা আবাসিক, উত্তরা, কাফরুল, বাড্ডা, মেরুল বাড্ড, রামপুরা, বনশ্রী,  মেরাদিয়া, ডেমরা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া, শনির আখড়া, রাগেরবাগ এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দৃশ্যমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top