শতবর্ষে ফেনী কলেজ

Feni-college-NM24.jpg

ফেনী কলেজ ভবন। ফাইল ছবি।

ফেনী প্রতিনিধি ।।

বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ফেনী সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূরণ করছে ৮ আগস্ট । এ উপলক্ষে সোমবার (৮ আগস্ট) নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শতবর্ষ উদযাপন কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯২২ সালের ৮ আগস্ট ফেনী কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় ৪টি কলেজের মধ্যে একটি।

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯২২ সালের ৮ আগস্ট ফেনী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও কলেজ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর।

কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ফেনী হাই ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে সরকারী পাইলট হাই স্কুল) এর সেক্রেটারি রমনী মোহন গোস্বামীর কাছ থেকে ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদনপ্রাাপ্ত হয়ে ফেনী ও বিরিঞ্চি মৌজায় কলেজ বোর্ড অব ট্রাষ্টীগণের পক্ষে খাঁন বাহাদুর মৌলভী বজলুল হক ও গুরুদাস কর ১০০ টাকা ৪ কিস্তিতে পরিষদের শর্তে ৫ বিঘা ১৮ কাঠা ভূমি গ্রহণ করেন।

খান বাহাদুর মৌলভী বজলুল হক তখন ফেনী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ও ফেনী লোকাল বোর্ডের (১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) চেয়ারম্যান ছিলেন। ভূমি বুঝে পাওয়ার পর কলেজ কম্পাউন্ড ও হিন্দু-মুসলিম হোষ্টেল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে কলেজ প্রতিষ্ঠার সার্বিক কার্যক্রম এগুতে থাকে।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অধ্যক্ষ ছিলেন বিরেন্দ্র লাল ভট্টাচার্য। ১৯২৬ সালে অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর স্যার ল্যান্ডস হিউ ষ্টিভেনশন আই.সি.এস, সি আই.এস বর্তমান লাল দালানটি উদ্বোাধন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৬০-৬১ সালের দিকে কলেজের ডিগ্রী শাখা স্থানান্তরের জন্য ৯০নং ফলেশ্বর মৌজায় প্রায় ৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত অধীগ্রহণকৃত ভূমিতে বর্তমানে কলেজের একটি ছাত্রাবাস রয়েছে।

১৯৪৫ সালে কলেজে দুইটি বিষয়ে অনার্স ছিল এবং দুর্লভ বই সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অনার্স বিষয় দুটি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজে স্থানান্তরিত হয়। বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিভিন্ন কারণে সে অনার্স বিষয় দুইটি আর ফেরত আনা যায়নি।

১৯৬৩ সালে কলেজে বাণিজ্য বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বর্বর পাক হানাদার বাহিনী কলেজে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে লাইব্রেরির বই রান্নার কাজে ব্যবহার করে অনেক দুর্লভ বই নষ্ট করে দেয়।

পাকবাহিনী মুক্তিকামী বাংগালীদের ধরে এনে কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মমভাবে হত্যা করত। যার স্বাক্ষ্যবহন করছে কলেজে সংরক্ষিত অডিটোরিয়ামের পূর্ব পাশের বধ্যভূমি।

১৯৭৯ সালের ৭ মে কলেজটি জাতীয়করণ অর্থাৎ সরকারী কলেজ হিসাবে অধিভুক্ত করা হয়। তখন কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন মজিবুর রহমান।

১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স চালু হয়। পরবর্তীতে তারই ধারাবাহিকতায় ক্রমান্বয়ে আরো ১১টি বিষয়ে অনার্স চালু করা হয়। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে মাষ্টার্স শেষ পর্ব চালু করা হয়। বর্তমানে প্রাচীণতম বিদ্যাপিঠে ১৫ বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স শেষ পর্ব এবং ১০ বিষয়ে মাষ্টার্স ১ম পর্ব চালু আছে।

কলেজে ক্রীড়া শিক্ষক ও প্রদর্শকসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৭৫ জন শিক্ষক এবং সরকারী ও বেসরকারী মিলে ১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও ৪৯ জন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে এই কলেজে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।

এদিকে ফেনী কলেজের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে গত ৩ আগস্ট এক সভায় শতবর্ষপূর্তি উদযাপন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সভায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেবকে আহ্বায়ক ও ফেনী সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top