কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সাবেক মেয়র মনিরুলকে বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার, নিজামের স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ

cumilla.jpg

মনিরুল হক ও নিজাম উদ্দীন

কুমিল্লা প্রতিনিধি।।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থূী হওয়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় সাবেক মেয়র মনিরুল হক কে আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক ওরফে সাক্কুকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানানো হয়।

দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে মনিরুল হককে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মনিরুল হককে বহিষ্কারাদেশের কথা জানানো হয়। তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। মনিরুল হক কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

মনিরুল হক এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন ওরফে কায়সারও প্রার্থী। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর নিজাম উদ্দীন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

একই কারনে নিজাম উদ্দীনকেও প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠনের সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। একই সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মনির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এর আগে গত বছর অক্টোবরে মনিরুল হককে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানানো হয় ডিসেম্বর মাসে।

এরআগে মনিরুল হক বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করে মেয়র হন। এরপর ২০১৭ সালের তিনি বিএনপির থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আবারও মেয়র নির্বাচিত হন। একপর্যায়ে তিনি কুমিল্লায় বিএনপির কার্যক্রম থেকে দূরে সরে যান। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়ে।

এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় মনিরুল স্বতন্ত্র নির্বাচন করায় তাঁকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এ ব্যাপারে মো. মনিরুল হক বলেন, ‘জনগণের চাপে প্রার্থী হয়েছি। কুমিল্লার জনগণ আমাকে ভালোবেসে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নামিয়েছে। আমি জনগণের ওয়াদা পূরণের জন্য তত্পর রয়েছি। দল থেকে পদত্যাগ করেছি।’ আজীবনের জন্য বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দল বহিষ্কার করলে কী করব? নির্বাচন করব আমি।’

তবে এর আগে ১৬ মে মনিরুল জানিয়েছিলেন ১৭ মে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হলেই তিনি বিএনপি থেকে অব্যাহতি নেবেন বলে জানিয়েছেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তিনি দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। ১০ বছর পর আবার একই কায়দায় তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ মনিরুল হক বিএনপিদলীয় মেয়র হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে কাজ শুরু করেন। সোমবার (১৬ মে) তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগর ভবনে যান মনিরুল হক। এদিনও তাঁকে ঘিরে ছিলেন নগর ভবনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ীরা। মেয়র নিজ আসনে বসে বিভিন্ন ফাইলে সই করেন। দুপুরে মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দেন নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এরপর মেয়র নগরের নানুয়াদিঘিরপাড় নিজ বাসায় চলে যান। বিকেলে তিনি দলীয় অনুসারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

দলীয় নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের চাপে নির্বাচন করতে হচ্ছে দাবি করে মো. মনিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর দলের কাছে অব্যাহতি চাইবেন। কুমিল্লাবাসী তাঁদের পাশে তাঁকে চান। তাই নির্বাচন করছেন। ২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কুমিল্লার নগরপিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সব কাজ করতে পারেননি। কিন্তু নগরবাসী খুব সহজে তাঁর কাছে এসে সেবা পেয়েছেন। নির্বাচনের মাঠে তিনি আছেন।

শেষ দিনে কুসিক অফিস মেয়র সাক্কু পাশে পদত্যাগের সংবাদ সম্মেলনে নিজাম।

মেয়র প্রার্থী নিজাম স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ওরফে কায়সার। নিজাম উদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা একটায় নগরের বাদুরতলা এলাকার ধর্মসাগরপাড়ের নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি একটি যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে এ অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির এ সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে আমি সমর্থন করি। কিন্তু কুমিল্লার হামলা মামলার শিকার নির্যাতিত বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও কুমিল্লার জাতীয়তাবাদী শক্তির অনুরোধে আমাকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। আমি দলীয় পদ থেকে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আমার প্রিয় দল বিতর্কিত হবে বলে বিশ্বাস করি। তাই দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে আমি কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর সভাপতি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।’

এর আগে সকাল ১০টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই করা হয়। এতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।

জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দল যেন বিব্রত অবস্থায় না পড়ে সে জন্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। কুমিল্লা নগরবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের স্বার্থে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে আমাকে রায় দেবেন। এ নির্বাচন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্বাচন। ভয়ের কুমিল্লাকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর নির্বাচন।’

আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top