৩০০ বছরের ঐতিহ্য বজরা শাহী জামে মসজিদ ও কিছু কথা

NM24-1.jpg

নোয়াখালী প্রতিনিধি ॥

বজরা শাহী জামে মসজিদ। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায় মোঘল স্থাপনা। নোয়াখালী মাইজদী প্রধান শহর হতে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা নামক স্থানে প্রধান সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে বিখ্যাত এই বজরা শাহী জামে মসজিদ অবস্থিত।

নোয়াখালীসহ সমগ্র বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে রয়েছে এর ঐতিহাসিক অবদান। দিল্লীর মোগল সম্রাটগণ অবিভক্ত ভারতবর্ষে ৩০০ বছরের অধিকাল রাজত্ব করেন। এদীর্ঘ সময়কালে মোগল সম্রাটগণ এবং তাদের উচ্চপদস্থ আমলারা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ইমারত, মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজো স্থাপত্য শিল্পের বিরল ও উজ্জ্বল নির্দশন হিসেবে বিরাজমান।

এগুলোর মধ্যে আগ্রার তাজমহল, সেকেন্দ্রা, দেওয়ানে আম, আগ্রার দূর্গ, দিল্লীর লাল কেল্লা ও দিল্লির শাহী জামে মসজিদ অন্যতম। দিল্লীর বিখ্যাত জামে মসজিদের অনুকরণে মোগল জমিদার আমান উল্লাহ খান ১১৫৪ হিজরিসাল, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ সালে অর্থাৎ প্রায় তিনশত বছর পূর্বে বজরাশাহী মসজিদ নির্মাণ করেন যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শনহিসেবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে।

তৎকালীন সময়ে জমিদার আমান উল্যাহ্ তাঁর বাড়ীর সম্মুখে ৩০ একর জমির উপর উঁচু পাড় যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট এ ঐতিহাসিক মসজিদখানা নির্মাণ করেন। এ মসজিদকে মজবুত করার জন্য মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচ থেকে ভীত তৈরী করা হয়। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দ্বারা গম্বুজগুলো সুশোভিত করা হয়। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে ৩টি ধনুকাকৃতি দরজা। মসজিদের প্রবেশ পথের উপর রয়েছে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেওয়ালে ৩টি কারুকার্য খচিত মিহরাব আছে।

মোগলসম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দা তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী এ ঐতিহাসিক মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর বংশধরগণ যোগ্যতা অনুসারে আজো এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে প্রথম ইমাম সাহেবের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী উক্ত মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ মসজিদে কিছু মানত করলে তাতে শুভ ফল পাওয়া যায়। তাই দেখা যায় যে, দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি পাওয়ার আশায় অগণিত মহিলা ও পুরুষ প্রতিদিন এ মসজিদে টাকা পয়সা সিন্নি দান করেন। এছাড়া বহু দূর- দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ ঐতিহাসিক মসজিদখানার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এবং দুর্লভ নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।

কিভাবে যাওয়া যায়: নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সাযোগে বজরা হাসপাতালের সম্মুখে নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে ২০০ গজ পশ্চিমে গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top