ভারতবর্ষে শাসকদের সঙ্গে আলেমদের কর্মপন্থা

50322103_1134906890002021_4929926340393566208_n.jpg

ইসলাম ও ডেস্ক জীবন।।

হিজরি প্রথম শতাব্দীতে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাতে সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষ মুসলিম বিশ্বের মানচিত্রে প্রবেশ করে। অতঃপর আফগান, গজনি ও ঘুরি বংশ শাসন করে। এরপর জহির উদ্দিন বাবরের মাধ্যমে মোগলদের শাসন শুরু হয়, যা ব্রিটিশদের শাসনকাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৩৭৩ হি. (১৮৫৭ খ্রি.) ইংরেজ সরকার সর্বশেষ স্বাধীন মোগল শাসক বাহাদুর শাহকে বার্মায় নির্বাসন করে।

অনারব শাসকদের মধ্যে মাহমুদ গজনবি সর্বপ্রথম ভারতে আসেন। ইসলাম প্রচার-প্রসারে তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ। ইসলামের জ্ঞান সমাজে ছড়িয়ে দিতে আলেমরাও ছিলেন তাঁর সেনাবাহিনীতে। আরো ছিলেন মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও বিচক্ষণ-জ্ঞানী ব্যক্তিরা। ভারতের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে আবু রায়হান আল বেরুনির মতো জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীকেও সঙ্গে রেখেছিলেন। গজনি বংশের মতো ঘুরি বংশের শাসকদের মধ্যেও ইসলাম প্রচার-প্রসারে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল। নবীন মুসলিম হিসেবে ইসলামী ভাবধারা ও চিন্তা-চেতনা পুরোপুরি ধারণ করতে না পারলেও আলেমদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখা ভারতের মুসলিম শাসকদের ঐতিহ্য ছিল। নানা ধর্মের লোকদের সঙ্গে শাসকরা চলাফেরা করলেও অন্তরে ইসলামের প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না। এ সময় একনিষ্ঠ আল্লাহভীরু আলেমদের কর্মপন্থা ছিল, নির্মোহ জীবন গঠন করে শাসকদের সুপরামর্শ দেওয়া এবং সমাজের সব শ্রেণির মধ্যে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট থাকা। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে আলেমরা তাঁদের ইসলামের দিকনির্দেশনা প্রদান করতেন এবং ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধনের চেষ্টা করতেন। আলেমদের সান্নিধ্য পেয়ে আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ও ইসলামী শিষ্টাচারের প্রভাবে ভারতবর্ষে খোদাভীরু শাসকগোষ্ঠীর আগমন ঘটেছিল।

শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতি, শিষ্টাচার, দাওয়াত ও ইলম চর্চায় নিজেদের ব্যস্ত ছিলেন না আলেমরা। বরং শাসকদের আনুকূল্যে থাকা রাজ-আলেমদের ভ্রান্তি ও স্খলন সংশোধনে এই একনিষ্ঠ আলেমদের ভূমিকা অপরিসীম। শাসকদের সঙ্গে খোদাভীরু আলেমদের গভীর সম্পর্ক থাকলেও তা শুধু দ্বিন প্রচারের মাধ্যম ছিল। চরম দুঃখ-দুর্দশায় থাকলেও তাঁরা কারো কাছে সামান্য কিছুরও প্রত্যাশা করতেন না। বরং সবার জন্য নিবেদিত থাকত তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আতিথেয়তার দস্তরখানা। বিপুল পরিমাণ ভাবশিষ্যের কারণে আলেমদেরই মুকুটহীন সম্রাট বলে মনে করা হতো। বাহ্যিক শক্তিহীন এই শ্রেণির ক্ষমতা ছিল মানুষের অন্তরের গহিনে। আধ্যাত্মিক শক্তিবলে তাঁরা ইসলামের ব্যাপক প্রসার করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রখ্যাত দায়ি শাইখুল ইসলাম মুইনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর নাম প্রবাদতুল্য।

ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে ইসলামের প্রতি ভাব-গাম্ভীর্য তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলেন আলেমরা। নিজের জীবন ও সম্পদ ব্যয় করে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা ছড়িয়ে দিতেন তাঁরা। আলেমদের এই নীরব কর্মপন্থায় সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বিকৃতি ও হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায় ইসলাম। লেখক : সাইয়েদ ওয়াজেহ রশিদ নদভি (রহ.)। ভাষান্তর : মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top