প্রধানমন্ত্রী ও স্বারষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ : নোয়াখালীতে দুদকের আঞ্চলিক কার্যালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত

Ayat-Noakhali-News-26-07-20-2.jpg

এইচ.এম আয়াত উল্যা, নোয়াখালী থেকে।।

প্রধানমন্ত্রী ও স্বারষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে দুদকের নোয়াখালী আঞ্চলিক কার্যালয়। ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে এ কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। নিরপরাধ মানুষদের বিনা অভিযোগে হয়রানির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। কোন ব্যক্তি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব অভিযোগের পরে দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এ অসাধু কর্মকর্তারা। সুত্রে জানা যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে নোয়াখালী সমন্বিত অঞ্চলের দুদক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

এ দূর্নীতির মূল নায়ক দুদক নোয়াখালী সমন্বিত অঞ্চলের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। তার সাথে আরো রয়েছেন উপ-পরিচালক তালেবুর রহমান, সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান, সুবেল আহম্মেদ, আলতাফ হোসেন, হোসেন শরীফ, মেজবা, সরোয়ারসহ দুদক পিপি আবুল কাশেম ও স্থানীয় কিছু দালাল চক্র। তাদের দৌরাত্বে অসহায় জেলার সকল পেশাজীবি শ্রেণীর কিছু ব্যক্তি।

জানা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য নিয়ে তার নিকট কত টাকা আছে, কিংবা কার সম্পত্তি বেশি আছে তা নিরুপন করে তাদের বিরুদ্ধে তারা নিজ হাতে বেনামী দরখাস্ত লিখে দাখিল করে-এবং উক্ত বেনামী দরখাস্তের ভিত্তিতে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তাদের অফিস কিংবা বাসায় গিয়ে তাদেরকে হুমকি প্রদান করে এই বলে চাকুরী এবং মানসম্মান নষ্ট করে দিবে বলে তারা জেলার অসহায় লোকজনের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুদক অফিসের কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু দালাল চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডিডি জাহাঙ্গীর আলম দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়ারিতে (৬৪/এ, রোড নং-৬) একটি ৫ম তলা ভবন, মেরুল বাড্ডায় (রোড নং-১৮, ব্লক-বি, এফ-৫) একটি ফ্ল্যাট, ২২৫/বি শেওরাপাড়া (ডি-৩) একটি ফ্ল্যাট, সুবাস্তু নজর ভেলী (৫ম তলায় ২টি দোকান ঘর রয়েছে)। তার নিজ বাড়ী ভোলাতে ৫ম তলা বিশিষ্ট একটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এডি মশিউর ঢাকার ডেমরাস্থ (২২৭/সি, শনির আখড়ায় ৬ষ্ঠ তলা ভবন, ১১৭ শান্তি নগর (ই-১) একটি ফ্ল্যাট, ৫৩/সি, মোহাম্মদপুরে জি-৫, আই-৩, দুটি ফ্ল্যাট। উত্তরায় রাজলক্ষি মার্কেটে ২টি দোকান। ঢাকা-কুমিল্লা গামি তিশা পরিবহন নামীয় ২টি বাস রয়েছে। নিজ বাড়ীতে একটি বহুতল ভবন রয়েছে। এডি সুবেল চাকুরী ৩ বছর পূর্ণ করার পূর্বেই ৫০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার নিজ অফিসের এক ষ্টাফ নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান। এডি সুবেল সম্প্রীতি নতুন বিয়ে করেছেন। বিয়ের ৩ মাসের মাথায় স্ত্রীর নামে ঢাকার বনশ্রীতে (রামপুরা ব্রীজের উল্টো দিকে (২৩/ডি, ইউনিট বি-২) ক্রয় করেছেন। ডিডি জাহাঙ্গীর এতই বদ মেজাজী যে, তার নিজের ড্রাইভারকে গাড়ী চলন্ত অবস্থায় গাড়ী থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন, ঢাকা যাওয়ার পথে লাকসামে তাকে সহ গাড়ী গাছের সঙ্গে মেরেছেন।

উক্ত কর্মকর্তারা নোয়াখালী জেলায় বহু কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরী খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আতœসাৎ করছে। দুদক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঘুষের বিস্তার ঘটিয়েছেন জেলার সব পেশাজীবি শ্রেণীর লোকজনের উপর তন্মধ্যে নোয়াখালী ডিসি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা। অফিস সহকারী আবদুল ওহাব থেকে ১০ লাখ টাকা, অফিস সহাকারী আবদুর রহিম থেকে ১২ লাখ টাকা, অফিস সহকারী আবু বক্কর ছিদ্দিক থেকে ৮ লাখ টাকা, তহশিলদার আজাদ থেকে ১৫ লাখ টাকা, তহশিলদার মুকিত কামাল থেকে ২০ লাখ টাকা, তহশিলদার মশিউর রহমান থেকে ১০ লাখ টাকা, ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান থেকে ৭ লাখ টাকা, কাষ্টম অফিসের পিয়ন শরীফ থেকে ১৫ লাখ টাকা, ডিসি অফিসের সাবেক নাজির লুৎফুর রহমান থেকে ৭ লাখ টাকা, বিআরটি অফিসের নজির আহম্মেদ থেকে ১৫ লাখ টাকা, সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা, ডিবি ওসি (সাবেক) আতাউর রহমান থেকে ১৫ লাখ টাকা। যা দুদক দালাল মোসলে উদ্দিন ও রিয়াজের মাধ্যমে গ্রহণ করে মাইজদী রোডস্থ আমানিয়া হোটেল, পেট্টোল পাম্প, নোয়াখালী সুপার মার্কেটের ৫ম তলায় অবস্থিত ফুড জোন নামক চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট থেকে।

ডিডি জাহাঙ্গীর ও এডি সুবেল আহম্মেদ নোয়াখালী বাখরাবাদ গ্যাস অফিসে গিয়ে ষ্টাফদেরকে হুমকি দিয়ে ও তাদের বাসায় গিয়ে হানা দিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদার জন্য কঠিন ভাষায় হুমকি দিয়ে আসেন। বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারীরা উপায়ান্তু না দেখে প্রত্যেকে ২ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে দেয় দুদক কর্মকর্তাদেরকে। এডি সুবেল আহম্মেদ মাইজদী রেল ষ্টেশনে লীজধারী প্রায় ৩০ জনকে নোটিশ প্রদান করে এই বলে যে, তারা অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করেছে। ঘর নির্মাণ কারীরা কোন উপায়ান্তু না দেখে প্রত্যেকে ২ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দেয় সুবেলকে। ডিডি জাহাঙ্গীর ও এডি সুবেল এর করাল গ্রাস থেকে নিস্তার মেলেনি চিকিৎসক সমাজের। তাদের দূর্নীতির থাবা বসিয়েছে প্রাইম হাসপাতালের মালিক ডাঃ মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, গুডহিল কমপ্লেক্স এর মালিক ডাঃ আবদুল হাই এর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মজিবুল হকের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সাবেক (আবাসিক চিকিৎসক) ডাঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা, ডাঃ ফারহানা তারান্নুম খান থেকে ৭ লাখ টাকা, ডাঃ আবদুস সাত্তার ফরায়েজী বাবুল এর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা, ডাঃ হরিভূষণ সরকারের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা, নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এর কাজের অনিয়ম দাবি করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে ৬০ লাখ টাকা। ঘুষ লেনদেনের চিত্র মাইজদী কোর্ট রেল ষ্টেশান ও নোয়াখালী সুপার মার্কেটের ৫ম তলায় অবস্থিত চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এডি সুবেল মাইজদী কোর্ট ষ্টেশানের সেলুন দোকানদার অনীল এর কাছ থেকে চাঁদার থাবা বসিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা আদায় করেন। টাকা দিলে মিলে নিষ্কৃতির সুযোগ না দিলে মান ইজ্জত লুটে পুটে নেয়। যার প্রত্যক্ষ উদাহারণ নোয়াখালী বিশেষ জজ আদালত বিচারাধীন দুদকের মামলাগুলো (বিশেষ ৩/১৪, ৭/১২, ৭/১৫, ৫/১৪, ৯/১১)সহ আরো একাধিক মামলা ডিডি জাহাঙ্গীর, এডি মশিউর, হোসেন শরীফ ও সুবেল প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে পিপি আবুল কাশেমের মাধ্যমে প্রকৃত স্বাক্ষী হাজির না করে ভূয়া স্বাক্ষী দাঁড় করিয়ে কিছু আসামী খালাস করে দেয়। তার মধ্যে কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

তাদের এই দূর্নীতির বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দরখাস্ত দাখিল করেছেন জেলার সুশীল সমাজ ও বিশিষ্টজনরা। তার মধ্যে অন্যতম নোয়াখালী জেলার আইনজীবি সমিতির অন্যতম সিনিয়র আইনজীবি ও সমিতির বার বার নির্বাচিত সভাপতি এ্যাডভোকেট নাজমুল হক, এ্যাডভোকেট এ.বি.এম জাকারিয়া। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি মোজাম্মেল হক মিলনসহ অনেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top