বৃষ্টি-বন্যা করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

Barsa.jpg

সংক্রমণ ছড়াতে পারে আশ্রয়কেন্দ্রে, সুরক্ষা বর্জ্য থেকে, উপসর্গধারীরা করোনা নাকি মৌসুমি রোগে আক্রান্ত তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা জরুরি

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপের এ সময়ে নততুন বিপদ হলো বর্ষাজনিত সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা থেকে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে করোনা আক্রান্তদের আরো বেশি দুর্বল করে ফেলতে পারে। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে করোনাভাইরাস ক্ষতিকর মাত্রায় ছড়ানোর ঝুঁকি আছে কি না তা নিয়ে মতভিন্নতা আছে। কিন্তু সুরক্ষা বর্জ্য থেকে বেশি মাত্রায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেও এই ভাইরাস কিছু ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা সম্ভব হবে না বলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি।

দেশের চিকিৎসক, রোগতত্ত্ব ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দিয়ে সবাইকে আরো সতর্ক ও সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, উপসর্গধারীরা করোনা নাকি মৌসুমি রোগে আক্রান্ত তা নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করতে হবে। কারণ চিকিৎসা করার জন্য এটা দরকার।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বন্যা ও বর্ষায় সাধারণত জ্বর সর্দি কাশি ও ডায়রিয়ার মতো রোগ হয়। এসব রোগে যে উপসর্গ থাকে সেগুলোর সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গের মিল থাকায় অনেকেই উদ্বিগ্ন হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক টিপস হিসেবে সবাই খেয়াল করতে পারেন ঘ্রাণশক্তি ও শারীরিক দুর্বলতার বিষয়টি। অন্য উপসর্গের সঙ্গে যদি ঘ্রাণশক্তি লোপ পায় এবং প্রচণ্ড দুর্বলতা দেখা দেয় তবে করোনা পরীক্ষার দরকার হবে। বর্ষায় ঘরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থাকে। এ সময় যতটা সম্ভব আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা, পরিবেশ শুকনো রাখা, বৃষ্টির পানি এড়িয়ে চলা ভালো হবে। যদিও বন্যাকবলিত এলাকার চিত্র ভিন্ন। তাই আলাদাভাবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে সেখানে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, বন্যার পানির সঙ্গে যে কাদামাটির মিশ্রণ থাকে তাতে করোনাভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। কিন্তু শহরাঞ্চলে বৃষ্টির জমা পানিতে নালা-নর্দমায় ফেলে দেওয়া মাস্ক-গ্লাভসসহ অন্য সুরক্ষাসামগ্রীর বর্জ্য থেকে করোনা ছড়াতে পারে। তিনি বলেন, পানির তাপমাত্রা যদি ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে হয় তবে ওই পানিতে করোনাভাইরাস ১০০ দিনের বেশি টিকতে পারে। ১৭ ডিগ্রির পানিতে ছয় দিন, ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের পানিতে ২২ দিন থাকতে পারে। তবে মাটিতে বা নালা-নর্দমায় যেহেতু বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দূষণযুক্ত পানি থাকে, সেখানে ভাইরাসটির বাঁচার সম্ভাবনা থাকে না।

রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, বন্যা বা বর্ষার পানির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারলেও বন্যাকবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের মধ্যে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকবে। কারণ ওই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা খুব কঠিন ব্যাপার। এ ছাড়া এলাকায় এলাকায় ত্রাণ বিতরণেও ঝুঁকি থাকে। এসব ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় স্বাস্থ্য টিমগুলোকে সতর্ক থাকা জরুরি। পাশাপাশি যাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা দেবে তাদের যেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দ্রুত পরিচর্যায় (আইসোলেশন) নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছরই বর্ষার সময় দেশে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও হয়তো তাই থাকবে। এবার যেহেতু করোনা সংক্রমণ রয়েছে এবং এর উপসর্গের সঙ্গে যেহেতু মিলে যায় তাই শহরে বা গ্রামে যেখানেই হোক কারো মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ, রোগ নিশ্চিত না হলে চিকিৎসাও শুরু করা যাবে না।

অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন শীল বলেন, ডায়রিয়া যেহেতু করোনায় আক্রান্তদের এখন সাধারণ উপসর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আক্রান্তদের মলের মাধ্যমে তা পানিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ড. মুশতাক হোসেন ও ড. আলমগীর বলছেন, করোনায় আক্রান্তদের মলের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ানোর সুযোগ আছে। তবে মলে যে পরিমাণ ভাইরাস থাকে তা খুবই কম ও দুর্বল মাত্রার। ফলে নর্দমার মাধ্যমে মলে থাকা ডায়রিয়া বা টাইফয়েডের জীবাণু কাউকে আক্রান্ত করতে পারলেও করোনা সক্ষম অবস্থায় থাকে না। তা ছাড়া নর্দমার নোংরা পানিতে ভাইরাসটি মারা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top