ইলসাম ও জীবন ডেস্ক ।।
করোনাকালে দেশের সব মুসলমানের কোরবানি বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ কারণ মানুষ এই করোনার মধ্যে অফিসে যাচ্ছেন, বাজারে যাচ্ছেন৷ তবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে যেহেতু মহামারি চলছে তাই কোরবানি দেওয়াসহ সব ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে৷ কিন্তু কোরবানি না দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আবার অনেকে বলছেন কোরবানির টাকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করলে কোরবানি আদায় হবে কিনা। ইসলামী গবেষকরা বলছেন এমন কোন সুযোগ নাই।
ইসলামের বিধান বলছে, কোরবানি না দিলে মুসলমানদের গুনাহ হবে৷ তবে কেউ যদি মনে করেন তার পক্ষে এই সময়ে কোরবানি দিলে শারীরিক সমস্যা বা অন্য কোনো ক্ষতি হতে পারে, তাহলে তিনি না-ও দিতে পারেন৷ কিন্তু পরে তাকে স্বাভাবিক সময়ে কাফফারা দিতে হবে৷ বাংলাদেশের ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুফতিরা এমন মত জানিয়েছন৷
কোরবানি কারা দেবেন
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানরা কোরবানি দেবেন৷ এই সামর্থ্য বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে৷ শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘কোরাবানির তিন দিনে কোনো মুসলামানের কাছে যদি জাকাত দেওয়ার ‘নিসাব’ পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত থাকে, তাহলে তাকে কোরবানি দিতে হবে৷ জাকাত ফরজ হতে সারাবছর ধরে ওই পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ থাকতে হয়৷ এটাই হলো কোরবানির সাথে জাকাতের পার্থক্য৷”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান বলেন, ‘‘যার কাছে কোরবানির সময় কোরবানির পশু কেনার মতো টাকা থাকবে, তাকেই কোরবানি দিতে হবে৷ জাকাতের নিসাব পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা ওই সময় থাকতে হবে তা নয়৷”
কোরবানি কি বন্ধ রাখা যায়?
মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের মতে, সামর্থ্যবানরা এই করোনার সময়েও কোরবানি বাদ দিতে পারবেন না৷ এই ওয়াজিব বাদ দিলে গুনাহ হবে৷ যদি কোনো মুসলামান কোরবানি না করে সেই টাকা দান করে দেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না তা-ও করা যাবে না৷ নামাজ বাদ দিয়ে শুধু রোজা রাখলে তাতে নামাজের ফরজ আদায় হয় না৷ নামাজও পড়তে হবে৷”
তার মতে, অফিস, হাট-বাজার সবই চলছে৷ তাহলে কোরবানি কেন হবে না৷ ইসলামের ইতিহাসে কোরবানি বাদ দেয়ার কোনো নজির নাই৷
তবে তিনটি পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবে কোনো মুসলমান কোরবানির সময় কোরবানি না-ও দিতে পারেন৷ কিন্তু পরে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে৷ সুবিধামতো সময়ে কোরবানির টাকা দিয়ে একটি পশু কিনে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে বলে জানান মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ৷
ওই তিনটি পরিস্থিতি হলো: সাধারণ শঙ্কা, প্রবল আশঙ্কা এবং নিশ্চিত ক্ষতি৷ করোনার সময় কোরবানি দিলে শারীরিক ক্ষতি অথবা ক্ষতি হবে এমন তথ্যগত প্রমাণ পেলে কিংবা নিশ্চিতভাবে জীবনহানির আশঙ্কা হতে পারে এমন ক্ষেত্রে কোরবানির সময় কোরবানি না-ও দিতে পারেন৷
অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান বলেন, ‘‘আরো অনেক কারণে কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির সময় কোরবানি করতে না-ও পারেন৷ যেমন, কোরবানির কোনো পশু পাওয়া না গেলে বা দুর্যোগের শিকার হলে৷ এরকম হলে পরে কোরবানির পশু কেনার টাকা দান করে দিলেই হবে৷”
তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বা সব মুসলমান মিলে কোরবানি বাদ দেয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হয়নি বলে তিনি মনে করেন৷
তারা তিনজনই বলেন, মসজিদ তালা মেরে রাখা যাবে না৷ কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতিতে মসজিদেই নামাজ পড়তে হবে, এমন নয়৷ আর ঘরে নামাজ পড়লে ফরজ আদায় হয়৷ এবারের হজ ও মসজিদে সীমিত নামাজের সাথে কোরবানির তুলনা করা তারা সঠিক মনে করেন না৷
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘তবে এবার কোরবানিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে৷ কোরবানির পশুর হাট থেকে শুরু করে পশু জবাই সবক্ষেত্রে৷ এটার ব্যাবস্থা যেমন সরকার করবে৷ তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার৷”