কোম্পানীগজ্ঞের আওয়ামী রাজনীতি নামক মহাকাব্যের সফল নায়ক জনাব আবদুল কাদের মির্জা

Mirza-New.jpg

এ এন এম শেখ আবদুল্যাহ ।।

আওয়ামীলীগের এখন ভরা যৌবন । যেমনি বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মার দু’কূল ভাসিয়ে উত্তাল ঢেউ জল ছল ছল করে , বলা যায় ঠিকক তেমনিই । নেতার অভাব নেই – পাজেরো গাড়িতে নেতা , গাছে ঝুলছে নেতা , মাননীয় মন্ত্রীর গাড়ীবহরে নেতা , মিটিংয়ের সামনের সারিতে নেতা, সেলফিলীগ নেতা , আরও কত হাজার রং – ঢং এ নেতা । এদের স্বরুপ লিখতে হলে বঙ্গোপসাগরের জল শুকিয়ে যাবে । আজকে আমার বিষয় সেটা নয় । আজ শুধু আমি বলতে চাই ১৯৮০ সালে আমাকে ‘ জয় বাংলা ‘ শিখানো কোম্পানীগজ্ঞের আওয়ামী রাজনীতির হেডমাস্টার জনাব আবদুল কাদের মির্জা ও রাজনীতিতে রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার নিয়ে ।

জনাব আবদুল কাদের মির্জা শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান । এ শিক্ষায়তন থেকে রাজনৈতিক দীক্ষা নিয়ে হাতেগোনা দু’ চার জন ব্যতীত আজ অনেকেই তো কোম্পানীগজ্ঞ কে শাসন – শোষণ করছেন । ‘৭৫ পরবর্তী আওয়ামীলীগের চরম র্দুদিনে সন্তানের ন্যায় বুকে জড়িয়ে ধরে আওয়ামী রাজনীতি কে যিনি আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তিনিও তো আবদুল কাদের মির্জা । সময়ের প্রয়োজনে অনেকেই বিভিন্ন পদ – পদবী , ক্ষমতার চেয়ার অলংকৃত করেছেন ; এজন্য তিনি বা তাঁরা জনাব আবদুল কাদের মির্জার সমকক্ষ এ কথা ভাবা আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত নহে ।

আমরা জানি কোন একটি বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী অর্জন করতে হলে ঐ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞের অধিনে দু’তিন বছর নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা করলে তিনি ঐ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের যোগ্যতা অর্জন করেন । জনাব আবদুল কাদের মির্জা আজ ৪৫/৫০ বছর একই বিষয় ‘‘ কোম্পানীগজ্ঞের আওয়ামী রাজনীতি ‘’ বিষয়ে গবেষণা করে চলেছেন । সুতরাং তাঁকে তো কোম্পানীগজ্ঞের আওয়ামী রাজনীতিতে ‘ ডক্টর অব আওয়ামী পলিটিক্স ‘ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না ।

আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ বুকে লালন করি আমাদের শ্রদ্ধা ও শিষ্ঠাচার শিখতে হলে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জীবন থেকেও অনেক কিছু শিখার আছে । আজ এ লেখা লিখার সময় আমার সামনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জীবনের তিনটি ছবি বার বার চোখের সামনে ভেসে আসছে –

সদ্য স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান , তাঁরই রাজনৈতিক গুরু মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাহেবের জীর্ণকুটিরে গিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করছেন । তিনি ইচ্ছা করলে উনাকে গাড়ি পাঠিয়ে গণভবনে নিয়ে আসতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা করেননি । এটাই শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ও শিষ্ঠাচার ।

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও দেশের ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী । শয্যাশায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবকে দেখতে গেলেন । কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব একেবারে শয্যাশায়িত । বঙ্গবন্ধু কোন চেয়ার কিংবা খাটে বসলেন না , একেবারেই মাথার নিকট নিচে পিঁড়িতে বসলেন । এতে বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রীত্ব কিংবা জাতির পিতা কোনটাই ধূলায় মিশে যায়নি । বরং তিনি মহিমান্বিত হয়েছেন ।

কোন একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা ও তাঁর শিক্ষক সদ্য প্রয়াত ডঃ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাহেব একই অনুষ্ঠানে উপস্হিত হয়েছিলেন । সেখানে লালগালিচার ব্যবস্হা ছিল । শেখ হাসিনা তাঁর শিক্ষক ডঃ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান কে লালগালিচার উপর দিয়ে সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজে গালিচার বাহির দিয়ে হেঁটে সামনে এগোচ্ছিলেন । এটাই রাজনৈতিক শিক্ষা ও শিষ্ঠাচার । ইহা কিন্তু রাজনৈতিক নেতা – কর্মিদের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে । আমাদের কে এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে রাজনীতিতে পদচারণা করা উচিত ।

আমি আমার বন্ধুকে ভালবাসি । কিন্তু আমার রক্তের সম্পর্কিত ভায়ের চেয়ে বেশি নয় । আমি আমার খালা – ফুফু কে শ্রদ্ধা করি , ভালবাসি । কিন্তু আমার গর্ভধারিনী মায়ের চেয়ে বেশী নয় । তেমনি আমি কোম্পানীগজ্ঞে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে এমন অনেককে শ্রদ্ধা করি , ভালবাসি । কিন্তু যিনি আমাকে প্রত্যন্তর গ্রাম থেকে এনে নেতা বানিয়েছেন সে মহান রাজনৈতিক গুরু জনাব আবদুল কাদের মির্জার চেয়ে অধিক নয় ।

আমরা যারা আওয়ামীলীগ ও জনাব আবদুল কাদের মির্জার র্দুদিনে সাথে ছিলাম , তাঁরা আজ বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে জীবন জীবিকার তাগিদে অথবা মান অভিমান করে কিংবা পাওয়া না পাওয়ার মনস্তাত্ত্বিক যোজন বিয়োজনে শারিরীকভাবে দূরত্বে অবস্হান করছি , আমরা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই – কোম্পানীগজ্ঞের আওয়ামী রাজনীতি ও নেতৃত্বের স্বার্থে আমরা আর জনাব আবদুল কাদের মির্জা এক এবং অভিন্ন সত্ত্বা ও আত্মা ।

আমার বয়সও ষাটের কোটায় । ছেলেমেয়েদের বয়সও ৩০ এর কোটায় । এখনও জনাব আবদুল কাদের মির্জার নাম মোবাইল স্কীনে ভেসে উঠলে পেটে মোছড় ধরে । কি বলে না কি বলে । র্নিঘুম রাত কাটিয়ে পরিকল্পনা করি , সকালে নেতাকে একথা বলবো , সেকথা বলবো । সকালে বসুরহাট গার্লস স্কুলের কোণ পর্যন্ত আসলে সব মুখস্ত পড়া ভুলে যাই । ভয়ে নয় , শ্রদ্ধায় – ভালবাসায় ।

ইদানিং কোম্পানীগজ্ঞে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সরগরম । জনাব আবদুল কাদের মির্জা কে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেজ্ঞ । বিষয়টি সত্যিই হাসির খোরাক যোগায় । আমি এর চরম প্রতিবাদ করছি । আমাদের মনে রাখতে হবে আবদুল কাদের মির্জার তুলনা শুধু তিনি নিজেই । চ্যালেজ্ঞ নয় , আসুন সমঝোতার ভিত্তিতে কোন রাজনৈতিক সমস্যা থাকলে এর সমাধান করে আমাদের প্রিয়নেতা জনাব জননেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের হাত কে শক্তিশালী করি ।

আমাদের সকলকে স্মরণ রাখা উচিত । আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জবিত জনাব আবদুল কাদের মির্জার হাতেগড়া কর্মি । দিনশেষে আমি আওয়ামীলীগ ও জনাব মির্জার কর্মি । জনাব আবদুল কাদের মির্জা আমার নেতা, আমার অহংকার ।
জয়বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা, পরে শিক্ষক ও মাঠ রাজনৈতিক নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top