শতাধিক আসনে জামায়াতের বিশেষ গুরুত্ব, ৫০ আসনে জয় নিশ্চিত করতে চায় জামায়াত, বিশেষ গুরুত্বে নেই বৃহত্তর নোয়াখালীর কোনো আসন

Jamat-l.jpg

মিয়া মোহাম্মদ মাকছুদ ।।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২৯৯ আসনে প্রার্থী দিলেও জয়ের টার্গেট নিতে চায় একশ আসন। ঘোষিত ২৯৯ আসনে আসনের মধ্যে প্রার্থীদের কর্মতৎপরতার পাশাপাশি চলছে কেন্দ্রের গোপন মাঠ জরিপ। সেই জরিপের ভিত্তিতে কিছু আসনে আসতে পারে পরিবর্তন।

দলের শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদেরসহ ৫০ আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। কমপক্ষে ৩০টি আসন যে কোনো মূল্যে জয় চায় জমায়াত। কারন ৩০ আসন না হলে সংসদের বিরোধী দলীয় দলেরও স্বীকৃতি মিলবে না। যেসব আসনে জামায়াতের অবস্থান ভালো, আগে জয়ী হয়েছে এবং নতুন যেসব আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব আসনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জামায়াতের জরিপে সম্ভাবনাময় বিশেষ কিছু আসনের মধ্যে ৩৯টি এরই মধ্যে বাছাই সম্পন্ন করেছে দলটি। প্রক্রিয়াধীন আছে আরও ১১ আসন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জামায়াতের নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-১৫ আসনে লড়বেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে এ আসনে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে প্রার্থী। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা, দ্বিতীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী। এ আসন থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে এসেছিলেন। খুলনার (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রচারে আছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে জয় পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে প্রার্থী।

বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করবেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, কারানির্যাতিত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল নির্বাচন করবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে অ্যাডভোকেট শিশির মনির, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, বগুড়া-১ আসনে অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ময়মনসিংহ-৫ আসনে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ নির্বাচন করবেন।

বিগত সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত নেতাদের সন্তানদের মধ্য থেকেও এবার প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমিন (পাবনা-১), মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী (পিরোজপুর-১) ও বড় ছেলে শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-২) এবং মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী মীর আহমদ বিন আরমান (ঢাকা-১৪) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা জামায়াতের আমির মো. ইকবাল হোসাইনকে।

দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসন বাছাই করা হয়েছে। যেসব আসনে জামায়াতের জনসমর্থন বেশি এবং দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে সেগুলোয় জয় পেতে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এরমধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনি আসনের সাতটিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড ), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)।

চট্টগ্রাম বিভাগে বৃহত্তর নোয়াখালীর ১৩ আসনের কোনো আসনেই দলটি সম্ভাবনাময় কোনো আসন এখনো বের করতে পারেনি বলে জানিয়েছে দলটির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িতরা।  দেশ স্বাধীনের পরে বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে যে কয়টিতেই জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে তাতে বৃহত্তর নোয়াখালীর কোন আসনেই জামানত ফেরৎ পায়নি দলের প্রার্থীরা। তাই এবারো বৃহত্তর নোয়াখালীতে দলের প্রার্থীদের জন্য তেমন কোন সম্ভাবনা দেখছে না দলটি।

কুমিল্লার ১১টি নির্বাচনি আসনের ছয়টিতে বিশেষ জোর দিচ্ছে জামায়াত। সেগুলো হলো কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর)-এ ইউসুফ হাকিম সোহেল, কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার)-এ সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিল্লা-৬ (সদর-সদর দক্ষিণ)-এ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)-এ ড. সৈয়দ এ কে এম সরোয়ার সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই)-এ ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত এবং কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)-এ দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে নয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সেগুলো হলো সিলেট-১ মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-৩ লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আনোয়ার হোসেন খান, সিলেট-৬ মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ-৫ আবদুস সালাম আল মাদানী, মৌলভীবাজার-১ আমিনুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. শাহজাহান আলী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন।

খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগেও আসন বাছাই করা যায়নি বলে জানান নেতারা। তবে এসব বিভাগেও আসন বের করার চেষ্টা করছে দলটি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘জামায়াত আসনভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের পক্ষ থেকে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। সবাই প্রচারে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তবে এখনো সব আসন বাছাই করা হয়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top