গত এক বছরে ১৮৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, বেকার হচ্ছে শ্রমিক, সেপ্টেম্বরেই শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ

Garments.jpg

পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক। ফাইল ছবি

মেইল ব্যবসা বাণিজ্য ডেস্ক ।।

গত এক বছরে দেশে ১৮৫টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। ১২ অক্টোবর রবিবার  রাজধানীতে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, ‘ক্রমাগত কারখানা বন্ধ হওয়া এবং উৎপাদন হ্রাসের ফলে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। রফতানি আদেশও আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।’

তিনি জানান, গত দুই মাসে তৈরি পোশাক রফতানি ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—যা একত্রে শিল্পখাতের ওপর চাপ তৈরি করছে।

সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত পোশাক মেলায় বাংলাদেশের উপস্থিতি এখন আগের চেয়ে কম। উদ্যোক্তারা অংশ নিলেও উৎপাদন ও বায়িং হাউস সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, ফলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড প্রমোশন ব্যাহত হচ্ছে।

বিজিবিএ মনে করে, উৎপাদক ও বায়িং হাউসগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ছাড়া টেকসই শিল্পায়ন সম্ভব নয়। তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে যৌথভাবে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানায়।

সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ পিন্টু, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুর রহমান ফরহাদ এবং মহাসচিব জাকির হোসেনও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, দ্রুত উৎপাদন সংকট নিরসন করা না গেলে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়া কঠিন হবে। তাদের মতে, শিল্প উৎপাদন ও রফতানি টিকিয়ে রাখতে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ
সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি)। এটি দেশের সামগ্রিক রফতানি আয়েও প্রতিফলিত হয়েছে।

রফতানিকারকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ক্রেতা নতুন কোনও অর্ডার দিতে এখন আগ্রহী নন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে অংশ হিসেবে ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক্যাল শুল্কের একটি অংশ সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘রফতানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা সম্ভব নয়। তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয়, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং অন্যান্য চাপে দম বন্ধ অবস্থায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

তাছাড়া, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যান্য বাজারে রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

বিকেএমইএ’র নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিলে রফতানি পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় রফতানিকারকদের ধৈর্যসহ ক্রেতাদের চাপ মোকাবিলা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top