নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর মানববন্ধন

n.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

নোয়াখালীকে ৯বম প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবিতে নোয়াখালী জেলা সমিতি ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লক্ষাধিক লোকের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

১১ অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টায় প্রতিকুল পরিবেশেও বৃহত্তর নোয়াখালীর তিন জেলা তথা নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর জেলার হাজার হাজার মানুষ সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার পূর্বেই পুরানা পল্টন মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তায় কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যায়। হালকা বৃষ্টিতে ভিজেই হাজার হাজার নোয়াখাইল্লাকে আওয়াজ তুলতে শুনা যায়, দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চায়।

বৃহত্তর নোয়াখালীর আঞ্চলিক সামাজিক শত শত সামাজিক সংগঠনকে বিভাগ দাবির ব্যানার নিয়ে হাজির হতে দেখা গিয়েছে। অর্ধশতাধিক হ্যান্ড মাইকে এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে প্রেস ক্লাব সম্মুখের রাস্তা। দুপুর পর্যন্ত মানববন্ধনটি জনসমাবেশে পরিণত হয়। দিনের মধ্যভাগে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সাবেক সিনিয়র সচিব কে এম মোহাম্মেল হক ও সদস্য সচিব হুমায়ূন কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারক লিপি দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।

৩ হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণার দাবিতে রাজধানীসহ পুরো বিশ্বের নোয়াখালীবাসী এখন রাস্তায়। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষাভাষীর দেড় কোটি মানুষের দাবি আজ শুধু নোয়াখালীতে সীমাবদ্ধ নয়। এই দাবি এখন বিশ্বব্যাপী নোয়াখাইল্লাদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যেখানে যেখানে নোয়াথালীর মানুষ আছে সর্বত্র নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শনিবারের প্রেসক্লাবের মানববন্ধনে সংহতি জানান বৃহত্তর নোয়াখালীর জাতীয় নেতারা ও সামাজিক ব্যক্তিত্বরা। মানববন্ধনে অংশ নেন নোয়াখালীর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ ও ব্যবসায়ীক নেতৃত্বরা।

এসময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তরা বলেন, ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাময় ক্রমবর্ধমান নোয়াখালী জেলাকে দেশের প্রশাসনিক প্রয়োজনে বিভাগ করা জরুরি। তারা বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালী তিন জেলাসহ জেলার আশো পাশের তথা নোয়াখালী ভাষাভাষীর দেড় কোটি মানুষের বিভাগ হবে নোয়াখালী বিভাগ।

নোয়াখালী নিজস্ব সংস্কৃতি-কৃষ্টি কালচার ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের বিবেচনা করে চট্টগ্রাম জেলার মিরেরশ্বরাই, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম-লাখসাম-নাঙ্গলকোর্ট-মনোহরগঞ্জ এবং চাঁদপুর জেলাসহ নোয়াখালী ভাষাভাষী দেড় কোটি মানুষকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগের দাবি জানান।

নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা নিয়ে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ গঠনের প্রস্তাব এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। প্রাচীন সমতট অঞ্চল যা বর্তমানে বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত। এই বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা অর্থাৎ নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং চাঁদপুর এই চার জেলা নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন করা হলে এই প্রস্তাাবিত বিভাগের আয়তন হবে কমবেশি ১0,000 বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা হবে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি, যা আয়তনে ও জনসংখ্যায় সিলেট ও বরিশাল বিভাগের চাইতেও বড় হবে।

সূতরাং বর্তমানে বৃহত্তর নোয়াখালী ও চাঁদপুর অঞ্চলের এ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বিভাগীয় সেবা দিতে নোয়াখালী বিভাগ গঠন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। আর তাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ খুব সহজে বিভাগীয় পর্যায়ের সেবা পেতে সক্ষম হবে এবং অত্র অঞ্চলের মানুষকে বহু কষ্টে সময় ও অর্থের অপচয় ঘটিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম যেতে হবে না।

অন্য কুমিল্লা যেহেতু রাজধানী থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্তিত দাউদকান্দিকে নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ হওয়ার কোন যুক্তি নেই। বরং দাউদকান্দি-ব্রাহ্মনবাড়িয়াসহ কুমিল্লকে ঢাকা বিভগে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ পরিণত করতে হলে দরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছানের প্রক্রিয়া বা মাধ্যম সৃষ্টি করা। এত সুষম উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। সুতরাং ভৌগলিক অবস্থান এবং উল্লিখিত চার জেলার মধ্যখান বিবেচনায় নোয়াখালী বিভাগ গঠন এখন যৌক্তিক দাবি।

নোয়াখালী বিভাগ গঠন করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হলে এবং তৃণমূলের জনগণের মতায়ন ঘটবে। আর এই অঞ্চলের তৃণমূলের মানুষের মতায়নের জন্যই বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের জনগণের বর্তমান সময়ের দাবি হছে প্রস্তাবিত নোয়াখালী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা।

মানববন্ধনের নোয়াখালীর জাতীয় নেতারা ও বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা ঘোষণা দেন নোয়াখালী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নোয়াখালীবাসী রাজপথ কাপানো আন্দোলন চলবেএমন অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top