লক্ষ্মীপুরের রায়পুর খুনের মামলার আসামিরা ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ পদে

Lax-Khunn.jpg

ফারুক কবিরাজ, ইমাম হোসেন গাজী ও আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বর। ছবি সংগৃহীত।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি ।।

খুনের মামলার তিন আসামিকে শীর্ষ পদে রেখে গঠন করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নিজ দলের কর্মীকে হত্যার মামলায় প্রধান আসামিকেই দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ। একই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া দুজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে দলীয় কর্মীকে হত্যার মামলা। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মো. ফারুক কবিরাজকে। এ ছাড়া ইমাম হোসেন গাজীকে সাধারণ সম্পাদক ও আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

এ বছরের ৭ এপ্রিল এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় ওই দিন মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৫) নামের এক কর্মী নিহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ দিন পর মারা যান জসিম উদ্দিন ব্যাপারী (৩৮) নামে আরও একজন।

সাইজুদ্দিন দেওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বড় ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৬০ জনকে আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মো. ফারুক কবিরাজকে, যিনি সদ্য গঠিত কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছেন। মামলাটিতে আসামির তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বরের নাম।

দলের একজন নেতার নির্দেশে খুনের মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। তবে আমি মনে করি, মামলার আসামিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখাটা দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টির কারণে সাধারণ মানুষ বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।

জসিম উদ্দিন ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় রায়পুর থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা হজল করিম ব্যাপারী। মামলাটিতে ইমাম হোসেন গাজীকে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যিনি নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের মাধ্যমে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে এসে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছালেহ আহাম্মদ তিনজনের পদ ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে ছালেহ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তবে ভোট গ্রহণের আগে নেতা-কর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

খুনের মামলার আসামিরা শীর্ষ পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের একজন নেতার নির্দেশে খুনের মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি করতে বাধ্য হয়েছি। তবে আমি মনে করি, মামলার আসামিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখাটা দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টির কারণে সাধারণ মানুষ বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।’

দলের স্থানীয় চারজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের নেতৃত্বে আনায় স্থানীয় রাজনীতিতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শেষ মুহূর্তে সমঝোতা করার বিষয়টিও দলের তৃণমূলের কর্মীরা স্বাভাবিকভাবে নেননি। দুটি ঘটনায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।

জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘আমি খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তা ছাড়া খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষ সমঝোতা হয়ে গেছে।’

সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন গাজী বলেন, ‘বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না।’ একই কথা বলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ কবির মাতব্বর। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার রাজনৈতিক অবস্থান ধ্বংস করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। খুনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জে এম নাজমুল ইসলাম আমাদেরকে বলেন, ‘মামলাটিতে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টা নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।’

হত্যা মামলা দুটি প্রসঙ্গে রায়পুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হওয়া পর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘খুনের মামলা স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top