বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন এক সহিংস ‘মব সংস্কৃতি’র কবলে

Nm247-journalist.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

প্রকাশিত সংবাদ নিজের বা দলের বিরূদ্ধে গেলেই মবে শিকার হচ্ছে সাংবাদিকরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এরকম মবের শিকার হচ্ছেন দেশের গণমাধ্যম কর্মীরা। যারাই ভিন্নমত পোষণ করেন বা ক্ষমতার অপব্যবহার তুলে ধরেন, তাদের ওপর হামলা চালায় ‘মব’। রাষ্ট্র এখন আর নিজ হাতে এসব মব দমন করে না বরং এসব মবকে পেশার গ্রুপ বলে ‘সামাজিক শাস্তি’র পরিবেশ তৈরি করে দেয়।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশা এখন নয়, সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। আগে ক্ষমতাশীনরা গণমাধ্যমকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল বা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই কৌশল বদলেছে। এখন যারা ভিন্নমত পোষণ করেন বা ক্ষমতার অপব্যবহার তুলে ধরেন, তাদের ওপর সরাসরি হামলা চালায় সংঘবদ্ধ এক ‘মব’। রাষ্ট্র এখন আর নিজ হাতে দমন করে না, বরং সামাজিক শাস্তির পরিবেশ তৈরি করে দেয়। এসব মব নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

গত ৬ অগাস্ট ঢাকায় ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: অভিযোগ নিষ্পত্তি ও স্বনিয়ন্ত্রণের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। ওই সংলাপে আলোচকদের বক্তব্যে যে অভিমত উঠে আসে তা হলো, প্রতিবেদন পক্ষে গেলে সাংবাদিকতা ‘মুক্ত’ থাকে, বিপক্ষে গেলে ‘মবের’ অথবা উশৃঙ্খল জনতার শিকার হতে হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিকতা মানেই ঝুঁকির মধ্যে সত্য প্রকাশ করা, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গাজীপুরে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা যেন এই কথারই হাতেনাতে প্রমাণ।

সাংবাদিক হামলাসহ সকল মবের দায় কেবল হামলাকারী ব্যক্তির নয়, এটি রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের ফল। যারা নিজেদের রাজনীতিকে জনগণের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বলে দাবি করে, তাদের হাতেই যখন সাংবাদিকরা হেনস্তার শিকার হন, তখন সেটি কেবল দ্বিচারিতা নয়, ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতেরও ইঙ্গিত দেয়।

দেশে সাংবাদিকতার পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, তা শুধু রাষ্ট্রীয় দমননীতির ফল নয় বরং রাজনৈতিক মিত্র, সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও ক্ষমতালোভীদের নির্মিত এক সহিংস সাংস্কৃতিক পরিবেশের ফল। এই বাস্তবতা বদলাতে হলে কেবল প্রশাসনিক নিরাপত্তা নয়, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা, মব-সচেতনতা ও মিডিয়ার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনতে হবে। যে মব আজ সাংবাদিকের মুখ বন্ধ করছে, কাল সে পাঠকেরও চোখ বন্ধ করে দেবে। আর তখন সাংবাদিকতার মৃত্যু হবে কেবল একটি পেশার মৃত্যু নয়, তা হবে গণতন্ত্রের আত্মহত্যা। সৌজন্যে: আপন কাগজ ডট কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top