নির্বাচন কমিশনে ভবন। ফাইল ছবি
বিশেষ প্রতিবেদক ।।
৫ আগস্ট মঙ্গলবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসিকে চিঠি দেবেন বলে জানান।
তারই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। চিঠিতে নির্বাচনের সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের পাশাপাশি রোজা শুরুর আগেও উল্লেখ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে।
গতকাল ৬ আগস্ট বুধবার ইসি কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের’ জন্য অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর গতকাল দিনভর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাড়তি উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ভোট গ্রহণের দুই মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে তপশিল ঘোষণা করবে ইসি। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও কমিশনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে। কমিশনের প্রতি জনমনে আস্থা অর্জনকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চান বলেও জানান তিনি।
ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচনে সাধারণত তপশিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪৫ দিনের মতো সময় রাখা হয়। এবার কিছুটা সময় বেশি রাখা হতে পারে। এ জন্য অক্টোবরের মধ্যেই প্রস্তুতিমূলক সব কার্যক্রম গুটিয়ে আনাতে চাইছে তারা। তবে ভোটের তারিখ ঘোষণার আগে সার্বিক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক মাস ধরে সংলাপে বসার পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফলে এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা। সিইসি বলেন, নির্বাচনকে আয়নার মতো পরিষ্কার করতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে যেন কারও কোনো প্রশ্ন না থাকে, সে ব্যবস্থাই করা হবে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন।’
অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে ইসির প্রস্তুতি
নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন আইনবিধি ঠিক করার পাশাপাশি ভোটার তালিকা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসি। সব কাজ অক্টোবরের মধ্যে গুছিয়ে আনতে চায় ইসি।
এদিকে মধ্য সেপ্টেম্বরে দেশে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাত সদস্যের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দল। যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি ও চারজন স্থানীয়। নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও পরিবেশ মূল্যায়ন করবেন তারা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার ইসির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আরপিওর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হবে। পরে অধ্যাদেশের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আরপিওর সংশোধনীতে বিনা ভোটে বিজয় ঠেকাতে ‘না ভোট’ ফিরিয়ে আনা; জোটবদ্ধ হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট করা; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রার্থী হতে না পারা; পুরো আসনের ভোট গ্রহণ বন্ধের ক্ষমতা ইসিকে ফিরিয়ে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি এবং ভোট গ্রহণে ইসি ইভিএম পদ্ধতি বাদ রাখার প্রস্তাব থাকছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আচরণবিধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে।
ইসি এরই মধ্যে সীমানা আইন সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটার তালিকা সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা (সংসদ ও স্থানীয় সরকার), স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যম নীতিমালা জারি করেছে। পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে আবেদন পেলে বিধি অনুযায়ী শেষ করা হবে। নির্বাচনী ম্যানুয়াল দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।
এ ছাড়া নির্বাচনসংক্রান্ত আরও তিনটি আইন ও বিধি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে– নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধন এবং ইসি সচিবালয় আইন। ভেটিং শেষে এগুলো উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।