নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) নেতারা প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে সেন্ট মার্টিনের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তা ছাড়া পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে।
২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন টোয়াব নেতারা। তারা সেন্ট মার্টিনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কঠোরভাবে বন্ধ করে দ্বীপে রাত্রিযাপনসহ পর্যটন চালু রাখার পাশাপাশি টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিকল্প পথ তৈরি, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড লাইসেন্স, নবায়ন ফি, ব্যাংক স্থিতি ও জামানত রাখার বিধান বাতিল, ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সারা বছর সুন্দরবনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল চালু ও পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। নতুন করে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সরকারকে বলছি, আপনাদের কতিপয় সিদ্ধান্ত পর্যটন খাতকে ত্বরান্বিত করবে না। বিনিয়োগও আসবে না।’
চলতি সপ্তাহে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা যেতে পারলেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে যেতে পারবেন, থাকতেও পারবেন। এ সময় দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না।
সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি করে টোয়াব সভাপতি বলেন, ‘আমরা অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের সেবা দিতে চাই। সে জন্য সরকার যেসব বিধিনিষেধ মানতে বলবে, আমরা সেগুলো মেনে চলব।’ তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিনে পর্যটনের কারণে বাল্যবিবাহ কমেছে, পড়াশোনার হার বেড়েছে, চোরাচালান কমেছে; কোরাল কর্তন থেকে বিরত থাকছে মানুষ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আয়াজ উদ্দিন বর্তমানে বুয়েটের ছাত্র। ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি যে শার্ট পরে আছি, তা পর্যটনের টাকায় কেনা। এখনো দ্বীপের মানুষের শিক্ষার হার ২০ শতাংশের নিচে। আমাদের দ্বীপের মানুষের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতি করা হয়েছে, তা খুবই জটিল। এতে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাবেন। আমাদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যাবে। দ্বীপের মানুষের পরিবর্তন স্থির হয়ে যাবে।
টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি বলেন, দ্বীপের পরিবেশ বাঁচাতে মানুষের জীবন ধ্বংস করা গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশদূষণ বন্ধ করা সম্ভব। দ্বীপে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। জেনারেটর বন্ধ করতে সৌরবিদ্যুতে জোর দেওয়া সম্ভব।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুছ। তিনি বলেন, ট্যুর অপারেটর নিবন্ধনসংক্রান্ত নতুন বিধিমালায় কিছু নিয়ম ও শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে; এগুলো তাঁদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। এতে দেখা যায়, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড নিবন্ধন ও পরিচালনার লাইসেন্স আবেদনে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতি ও তিন লাখ টাকা জামানতের বাধ্যবাধকতা আছে। এটি বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প এগিয়ে নিতে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এ ছাড়া ট্যুর অপারেটর সেবায় ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করার ভ্রমণ ব্যয় বাড়ছে। এতে গোটা পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট, ই-ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সেন্ট মার্টিন দোকান মালিক সমিতি, বোট মালিক সমবায় সমিতি, মৎস্যজীবী মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।