সাংবাদিকদের নিঃশব্দ সংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট-বেদনা কেউ বোঝেনা

zahir.jpg

জহিরুল হক জহির ।।

ভূমিকা: সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা, সত্যকে উদঘাটন করার জন্য সাংবাদিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, সমাজের সামনে অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজপোর্টাল কিংবা রেডিও—সব জায়গাতেই সাংবাদিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জানার অধিকার পূরণের জন্য। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো,এই সাংবাদিকরাই যখন মানুষের দুঃখ–কষ্ট তুলে ধরেন, তখন তাদের নিজেদের দুঃখ–কষ্ট গুলো অদৃশ্য থেকে যায়।

সাধারণ মানুষ হয়তো সংবাদপত্রে শিরোনাম দেখেন, টেলিভিশনে সংবাদ শোনেন বা অনলাইনে কোনো রিপোর্ট পড়েন—কিন্তু এর পেছনে থাকা শ্রম, সংগ্রাম, ঝুঁকি ও মানসিক চাপ সম্পর্কে খুব কম মানুষই ধারণা রাখেন। সাংবাদিকরা প্রতিদিন এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যা অনেক সময় জীবন–মৃত্যুর সঙ্গেও লড়াই করতে হয়। তারা একদিকে সত্যকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, অন্যদিকে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থনৈতিক সংকট ও পারিবারিক চাপের মতো বাস্তবতাকে বহন করেন।

কিন্তু সমস্যা হলো, এই কষ্টগুলো সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। যেমন, কোনো দুর্ঘটনার ঘটনার পরপরই সাংবাদিককে সেখানে যেতে হয়, ছবি তুলতে হয়, তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। তখন তিনি নিজের মানবিক অনুভূতিগুলো চাপা দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও সাংবাদিকরা অন্যদের মতো ঘরে নিরাপদে বসে থাকতে পারেন না। তাদের যেতে হয় ঘটনাস্থলে, যেখানে অন্যরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।

ফলে সাংবাদিকদের জীবনের বেদনা, অস্বস্তি ও কষ্ট অনেকটা অদৃশ্যই থেকে যায়। এটিকে বলা যায়, এক ধরনের নিঃশব্দ সংগ্রাম।  এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব সাংবাদিকদের দুঃখ–কষ্ট, যেগুলো চোখে দেখা যায় না, কথায়ও পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না।

সাংবাদিকতার ইতিহাস ও সামাজিক ভূমিকা: সাংবাদিকতা একটি পেশা যা মানব সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সাথে গড়ে উঠেছে। মানুষ সবসময় জানতে চেয়েছে— কী হচ্ছে সমাজের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিতে। সংবাদ প্রচারের প্রাথমিক রূপ ছিল মৌখিক বা লিখিত বার্তা। ধীরে ধীরে এটি প্রিন্ট মিডিয়া, রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আধুনিক সাংবাদিকতায় রূপ নিয়েছে।

সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হলো সত্য প্রকাশ করা এবং জনগণকে তথ্য সরবরাহ করা। এটি সমাজে দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব গড়ে তোলে। একজন সাংবাদিক শুধুমাত্র খবর প্রদান করেন না, তিনি সমাজের চোখ, কান এবং মাঝে মাঝে কণ্ঠ হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই দায়িত্বের সঙ্গে আসে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। সাংবাদিকরা প্রায়শই এমন তথ্য সংগ্রহ করেন যা অন্য কেউ জানে না বা প্রকাশ করতে চায় না। এটি মানসিক চাপ ও ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়।

সাংবাদিকতার সামাজিক গুরুত্ব অগণিত। একটি সমাজে গণমাধ্যম থাকলে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা হয়। সরকারি নীতি, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, আইন ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে মানুষ সচেতন হয়। সাংবাদিকরা কখনো কখনো দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমাজের নেতৃত্বও দেন। তারা খবরের মাধ্যমে অন্যদের সচেতন করে, সামাজিক পরিবর্তন আনে।

তবে, এই সামাজিক দায়িত্বের সাথে যুক্ত আছে ব্যক্তিগত দুঃখ ও চাপ, যা সহজে চোখে পড়ে না। কারণ, সাংবাদিকরা প্রায়শই একাই নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করেন, নিজেদের অনুভূতি বা ভয় প্রকাশ করেন না। তারা জানেন সংবাদ প্রকাশের সময় তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা বা কষ্ট যেন খবরের স্বচ্ছতা নষ্ট না করে।

ফলে সাংবাদিকতার ইতিহাস শুধু পেশাগত গৌরব নয়, এটি লুকানো দুঃখ, সংগ্রাম এবং নিঃশব্দ ত্যাগের ইতিহাসও। আধুনিক যুগে সাংবাদিকরা যেমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দেন, তেমনি তারা নীরবভাবে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি ও মানসিক চাপ বহন করেন।

সাংবাদিকদের দৈনন্দিন সংগ্রাম:সাংবাদিকদের কাজ কখনোই সহজ নয়। প্রতিদিন তাদের মুখোমুখি হতে হয় নতুন-নতুন চ্যালেঞ্জের—যা শুধু পেশাগত নয়, মানসিক ও শারীরিক দিক থেকেও কঠিন। সংবাদ সংগ্রহ, সত্য যাচাই, রিপোর্ট লেখা এবং তা জনসমুক্ষে উপস্থাপন করতে এসবের মধ্যে লুকানো থাকে অসংখ্য ছোট-বড় কষ্ট।

সময় ও চাপের অসীমতা: সাংবাদিকদের জীবনে সময় খুব মূল্যবান, কিন্তু কখনও তা নিজের জন্য থাকে না। তারা সবসময় ‘সংবাদ’ বা ‘ঘটনা’ অনুসরণ করে চলেন। কোনো বড় দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি সংবাদ এসবের জন্য রাতের অন্ধকারে বা ভোরের অকাল ঘুম ভেঙে, তীব্র চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। কখনো কখনো এই চাপের ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঝুঁকি ও বিপদের মুখোমুখি: সাংবাদিকরা প্রায়শই এমন জায়গায় যেতে বাধ্য হন, যেখানে সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে থাকেন। যুদ্ধক্ষেত্র, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, অস্থির রাজনৈতিক এলাকা, অগ্নিকাণ্ড, সুনামি বা বন্যা, এসবের মধ্যে সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করেন। এই ঝুঁকি শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও বিপজ্জনক। অনেক সময় তারা বিপদে পড়েন, আহত হন বা প্রানহানির ঝুঁকি নিয়েও কাজ চালিয়ে যান।

তথ্য যাচাই ও সততা: একজন সাংবাদিকের কাজ শুধু খবর দেওয়া নয়, সত্য যাচাই করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। একটি ভুল খবর শুধু পেশাগত ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর নয়, সমাজে বিভ্রান্তি ও অন্যায়ের সুযোগও তৈরি করতে পারে। তাই সাংবাদিকরা সবসময় সতর্ক থাকেন, যাচাই করেন, উৎস গোপন রাখেন এবং কখনো কখনো নিজের স্বার্থের বিপরীতেও সত্য প্রকাশ করেন।

প্রতিদিনের মানসিক চাপ: দৈনন্দিন কাজের মধ্যে সাংবাদিকদের মানসিক চাপ খুবই সাধারণ বিষয়। কেউ কেউ পরিবারের কথা ভেবে চিন্তিত থাকেন, আবার কেউ সমাজের জন্য দায়িত্ব অনুভব করে নিজেকে চাপের মধ্যে রাখেন। কিন্তু এই মানসিক চাপ সাধারণ মানুষের চোখে আসে না। সংবাদ যখন আমাদের চোখে পড়ে, তখন আমরা ভাবি শুধু তথ্যের পরিমাণ, কিন্তু এর পেছনের সংগ্রাম বুঝতে পারিনা।

অপেক্ষা ও ত্যাগের জীবন: সাংবাদিকদের জীবন কখনোই সহজ নয়। তারা প্রায়শই পরিবার থেকে দূরে থাকেন, সামাজিক জীবন সীমিত থাকে, আর্থিক নিরাপত্তা কম। কিন্তু এই সমস্ত ত্যাগ সত্ত্বেও তারা সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। ফলে, দৈনন্দিন সংগ্রামে সাংবাদিকরা দৃঢ় মনোবল, ধৈর্য এবং সততার অনন্য মিশ্রণ প্রদর্শন করেন। তাদের দুঃখ-কষ্ট চোখে ধরা না দিলেও, প্রতিটি খবরের পেছনে লুকানো থাকে তাদের নিঃশব্দ সংগ্রাম।

পারিবারিক ও মানসিক চাপ: সাংবাদিকতা শুধু পেশাগত সংগ্রাম নয়, এটি ব্যক্তিগত জীবনের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। যারা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত, তারা জানেন—এই পেশা কখনোই ঘর-বাড়ি বা পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেনা। ফলে সাংবাদিকদের জীবনে পারিবারিক ও মানসিক চাপ থাকেই।

পারিবারিক জীবনে প্রভাব: সাংবাদিকদের কাজের সময়সূচী কোনো নিয়মে বাঁধা থাকে না। কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই রাতের অন্ধকারে বা ছুটির দিনেও তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এই অপ্রত্যাশিত সময়সূচীর কারণে পরিবার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে। সন্তানদের জন্মদিন,বার্ষিক অনুষ্ঠান বা গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে না পারা সাংবাদিকদের জন্য মানসিক কষ্টের কারণ। কিছু ক্ষেত্রে সংসার জীবনের সমঝোতা ভেঙে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপকে বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক চাপ ও চাপের কারণ: সাংবাদিকদের মানসিক চাপের বড় একটি উৎস হলো-ঘটনার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী ঘটনা, দুর্ঘটনা এসব সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের চোখের সামনে নানা কষ্ট ও দুঃখের দৃশ্য দেখতে হয়। এই দৃশ্যগুলো দীর্ঘসময় ব্রেন ও মনের ভিতর গভীর প্রভাব ফেলে। অনেক সাংবাদিক জানান, ঘরে ফেরার পরও তারা সেই ছবি বা ঘটনা ভুলতে পারেননা। ফলে মানসিক চাপ দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়।

কাজের চাপ এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা: সাংবাদিকদের ওপর চাপ থাকে দ্রুত এবং নির্ভুল সংবাদ দেয়ার। কখনো কোনো খবরের সত্যতা যাচাই করতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। এতে ঘুমের অভাব, অসুস্থতা,অস্থিরতা ও অবসাদ জন্মায়। মানসিক চাপের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বও থাকায় সাংবাদিকদের জীবন আরও জটিল হয়ে পড়ে।

মাজের বোঝাপড়া ও সমর্থনের অভাব: একজন সাংবাদিকের পরিবার ও বন্ধু প্রায়শই তাদের পেশার গুরুত্ব পুরোপুরি বোঝেনা। কেউ কেউ মনে করেন, সংবাদ লেখা বা রিপোর্টিং শুধুমাত্র ‘কাগজে লেখা’ বা ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো’। অথচ এর পেছনে থাকা মানসিক চাপ, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বোঝা কঠিন। এটি সাংবাদিকদের মানসিক বোঝা আরও ভারী করে। ফলে, সাংবাদিকরা পারিবারিক ও মানসিক চাপের সঙ্গে লড়াই করতে করতে সমাজের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ চালিয়ে যান। তাদের দুঃখ-কষ্ট চোখে দেখা যায় না, কথায়ও প্রকাশ পায় না, কিন্তু প্রতিটি সংবাদ ও রিপোর্টের পেছনে লুকানো থাকে এই নিঃশব্দ সংগ্রাম।
আর্থিক অনিশ্চয়তা: সাংবাদিকতার কাজ শুধুই পরিশ্রম বা মানসিক চাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এতে আর্থিক অনিশ্চয়তাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সাংবাদিকের জীবনে এই আর্থিক অস্থিরতা তাদের জীবনের মান, পরিবার ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।

পেশার বৈচিত্র্য ও আয়: সাংবাদিকতা আজ একটি পেশাগত ক্ষেত্র হলেও, এর মধ্যে আয়ের ধারা সবসময় স্থির থাকে না। প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রতিটি ক্ষেত্রের বেতন ও সুবিধা আলাদা। নবীন সাংবাদিকদের জন্য অনেক সময় বেতন খুবই সীমিত, যা দৈনন্দিন জীবনধারণেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। কিছু ক্ষেত্রে তারা ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করেন, যেখানে নিয়মিত আয় থাকে না।

অপ্রত্যাশিত খরচ ও ঝুঁকি: সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের প্রায়শই যাতায়াত, ক্যামেরা, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য খরচ করতে হয়। অনেক সময় এই খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করার সময় জীবনরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে আর্থিক চাপ তাদের জীবনের একটি অনিবার্য অংশ।

অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব: বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে চাকরি করলে চাকরির স্থায়িত্ব অনেক সময় অনিশ্চিত থাকে। কোনো বড় পরিবর্তন, কোম্পানির আর্থিক সংকট বা নীতি পরিবর্তনের কারণে সাংবাদিকদের চাকরি চলে যায়। ফলে পরিবার, সন্তান এবং দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জন্মায়।

মানসিক প্রভাব: আর্থিক অনিশ্চয়তা মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সাংবাদিকরা কখনো কখনো জানেননা, মাসের শেষে বেতন ঠিকভাবে পাবেন কি না। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, ঘুমের সমস্যা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই চাপ সাধারণ মানুষের চোখে প্রায়শই ধরা পড়ে না।

সত্যের পথে ত্যাগ: সবকিছু সত্ত্বেও সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। তারা জানেন, আয়ের অস্থিরতা থাকলেও সমাজের জানার অধিকার পূরণের দায়িত্ব তাদের কাঁধে। এই দুঃখ ও আর্থিক চাপের মধ্যেও তারা পেশাদারিত্ব ধরে রাখেন। ফলে, সাংবাদিকদের আর্থিক অনিশ্চয়তা তাদের জীবনের একটি অদৃশ্য কষ্টের অংশ, যা সাধারণ মানুষ প্রায়শই অনুভব করতে পারে না। এই দুঃখও তাদের নিঃশব্দ সংগ্রামেরই অংশ।

রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপ: সাংবাদিকতার পেশা শুধু তথ্য সংগ্রহ বা খবর লেখার কাজ নয়, এটি অনেক সময় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রও হয়ে ওঠে। সাংবাদিকরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন যেখানে তাদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং পেশাগত দায়িত্ব সবই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপ: দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ যদি অস্থিতিশীল হয়, তাহলে সাংবাদিকদের কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। অনেক সময় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হুমকি বা প্রভাব প্রয়োগ করা হয়, যাতে তারা কোনো সংবাদ প্রকাশ না করে বা রাজনৈতিক পক্ষের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেন। এই চাপ সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নষ্ট করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও বাধা: সত্য প্রকাশ করা সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি কখনো কখনো এই দায়িত্বকে বাধাগ্রস্ত করে। সরকারী সংস্থা বা রাজনৈতিক দলের প্রভাব সাংবাদিকদের ওপর পড়ে। কখনো কখনো সাংবাদিকদের কাজে বাধা বা ব্ল্যাকলিস্টের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে সাংবাদিকদের মানসিক চাপ এবং দুঃখ আরও বৃদ্ধি পায়।

প্রাতিষ্ঠানিক চাপ: সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব নীতি, সম্পাদকীয় চাপ, সময়সীমা ও বেতন কাঠামো- সবই সাংবাদিকদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক চাপ সৃষ্টি করে। কখনো কখনো সাংবাদিকদের ওপর এমন নির্দেশনা আসতে পারে, যা তাদের পেশাগত নৈতিকতার সঙ্গে সংঘাত তৈরি করে। এই অবস্থায় সাংবাদিকদের নিঃশব্দ সংগ্রাম কারো চোখে পড়ে না।

হুমকি ও ভয়: রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপ শুধু মানসিক নয়, অনেক সময় শারীরিক ঝুঁকিও থাকে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গ্রেফতার বা সুনির্দিষ্ট হুমকির ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তারা যখন সংবাদ সংগ্রহ করতে যান, সবসময় ভয় ও সতর্কতার মধ্যে কাজ করতে হয়।

সমাজের চোখে অদৃশ্য সংগ্রাম: প্রতিটি সাংবাদিক রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপে নিঃশব্দভাবে লড়াই করে। সাধারণ মানুষ সংবাদ দেখে শুধু তথ্য গ্রহণ করে, কিন্তু পেছনের ঝুঁকি, মানসিক চাপ ও দুঃখ বোঝে না। এই চাপ সাংবাদিকদের দুঃখের আরেকটি অদৃশ্য দিক। ফলে, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপ সাংবাদিকদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের দুঃখ-কষ্ট কারো চোখে পড়ে না, কথায়ও প্রকাশ পায় না, কিন্তু সমাজের সত্য উদঘাটনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
ঝুঁকি ও প্রাণনাশের ভয়: সাংবাদিকতার সবচেয়ে অদৃশ্য এবং কঠিন দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঝুঁকি ও প্রাণনাশের ভয়। সাংবাদিকরা শুধু তথ্য সংগ্রহ করেন না, তারা নিজেকে বিপদের মধ্যে রাখেন—এবং সেই বিপদ কখনো চোখে দেখা যায় না।

প্রতিদিনের ঝুঁকি: যে কোনো সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা প্রায়ই বিপজ্জনক স্থানে যেতে বাধ্য হন। সন্ত্রাসী এলাকা, সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব জায়গায় সাংবাদিকরা প্রথমে পৌঁছান। সাধারণ মানুষ এই ঝুঁকি এড়াতে পারে, কিন্তু সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যান।

প্রাণনাশের ভয়: বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করার সময় সাংবাদিকদের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। শুধু সরাসরি হামলা নয়, অপহরণ, নির্যাতন বা হত্যার হুমকিও প্রায়ই থাকে। অনেক সময় সাংবাদিকরা এই ভয়কে প্রতিদিনের জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এই ভয় প্রকাশ করা, কথায় বলা বা চোখে আনা অসম্ভব।

মানসিক চাপ ও আতঙ্ক: প্রাণনাশের সম্ভাবনা সাংবাদিকদের মানসিক চাপকে বাড়িয়ে দেয়। তারা জানেন, খবরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এই চাপ ঘুম, মনোসংযোগ এবং মানসিক স্থিতি প্রভাবিত করে। তবুও সাংবাদিকরা সাহস ও দায়িত্ববোধের কারণে কাজ চালিয়ে যান।

সামাজিক সচেতনতার অভাব: সাধারণ মানুষ খবর দেখলেও সাংবাদিকদের এই ঝুঁকি ও আতঙ্ক বোঝে না। তারা মনে করেন সাংবাদিকরা শুধু তথ্য গ্রহণ করেন, কিন্তু পেছনের ভয়, মানসিক চাপ এবং জীবনহানির সম্ভাবনা তাদের চোখে ধরা দেয় না। ফলে সাংবাদিকদের নিঃশব্দ সংগ্রাম সমাজে কমই দেখা যায়।

সত্য প্রকাশের ত্যাগ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো-সাংবাদিকরা ঝুঁকি ও ভয় উপেক্ষা করে সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। তাদের সাহস, আত্মত্যাগ এবং দায়িত্ববোধই নিশ্চিত করে সমাজের জানার অধিকার পূর্ণ হচ্ছে। ফলে, সাংবাদিকদের ঝুঁকি ও প্রাণনাশের ভয় তাদের দুঃখের আরেকটি অদৃশ্য মাত্রা। চোখে দেখা যায় না, কথায় প্রকাশ হয় না, কিন্তু প্রতিটি সংবাদ এবং প্রতিবেদনের পেছনে লুকানো থাকে এই নিঃশব্দ সংগ্রাম।

সাংবাদিকদের অদৃশ্য বেদনা: সাংবাদিকদের দুঃখ–কষ্ট চোখে পড়ে না, কথায়ও পুরোপুরি প্রকাশ পায় না—এটাই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। দৈনন্দিন সংগ্রাম,ঝুঁকি, মানসিক চাপ, পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যা—এগুলো তাদের জীবনে অদৃশ্য বেদনা তৈরি করে।

অদৃশ্য সংগ্রামের স্বরূপ: সাংবাদিকরা দিনের পর দিন সমাজের জন্য কাজ করেন, অথচ তাদের সংগ্রাম,ব্যথা ও চাপ সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। একজন সাংবাদিক দুর্ঘটনা, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা সামাজিক অস্থিরতার স্থলে পৌঁছে খবর সংগ্রহ করেন, কিন্তু কেউ তাদের মানসিক বা শারীরিক কষ্ট উপলব্ধি করে না। এই কষ্টের মাত্রা, কখনো কখনো অনেক গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

মানসিক ও আবেগগত চাপ: দৃশ্যমান ঝুঁকি ছাড়াও সাংবাদিকদের মানসিক চাপ সবচেয়ে বড়। যেসব ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেন, যেমন মৃত্যু, আহত মানুষ, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার- এসব দৃশ্য তাদের মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। কখনো কখনো তারা এই অনুভূতি চাপা দিতে বাধ্য হন,যাতে পেশাগত দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটে।

পারিবারিক ও সামাজিক ব্যর্থতার অনুভূতি: সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন প্রায়শই ত্যাগের সঙ্গে জড়িত। সন্তানদের জন্মদিন, পরিবারিক অনুষ্ঠান, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো এসব থেকে তারা দূরে থাকেন। এতে একটি মানসিক চাপ ও দুঃখ তৈরি হয়, যা বাইরে থেকে দেখা যায় না।

অর্থনৈতিক ও পেশাগত চাপের প্রভাব: নিরাপদ চাকরি না থাকা, সীমিত বেতন, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক চাপ এসব মিলিয়ে সাংবাদিকদের দুঃখের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ সংবাদ দেখে তথ্য পান, কিন্তু এর পেছনের দুঃখ বোঝে না।

সাহস ও দায়িত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব: সত্য প্রকাশের দায়িত্বে তাদের সাহস অপরিসীম, কিন্তু এই দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত কষ্টের মধ্যে তারা নিঃশব্দ দ্বন্দ্বে ভুগেন। তারা জানেন- সমাজের জন্য সঠিক খবর দেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তাদের জীবন এবং মানসিক শান্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফলে, সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি পেশাগত দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত। এই দুঃখ চোখে দেখা যায় না, কথায় প্রকাশ হয় না, কিন্তু প্রতিটি সংবাদ, প্রতিবেদন ও সাংবাদিকতার পেছনে লুকানো থাকে এই অদৃশ্য বেদনা।

সাধারণ মানুষের চোখে সাংবাদিক: সাংবাদিকদের কাজের অন্যতম একটি দিক হলো—তারা সমাজের জন্য সত্য প্রকাশ করেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখে তাদের কাজ প্রায়শই সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায় না। সংবাদ পড়া বা দেখার সময় মানুষ শুধু তথ্য গ্রহণ করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের দৈনন্দিন সংগ্রাম, ঝুঁকি এবং মানসিক চাপ, তারা কখনোই বোঝে না।

সংবাদকে কেন্দ্র করে মানুষের ধারণা: সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের খবরের মাধ্যম হিসেবে দেখে। সংবাদপত্রের শিরোনাম, টেলিভিশনের রিপোর্ট বা অনলাইনের আর্টিকেল-এই তথ্যই তাদের কাছে সাংবাদিকের পরিচয়। কিন্তু তারা সচরাচর জানেন না, সেই খবর সংগ্রহ করতে সাংবাদিককে কী কী ঝুঁকি নিতে হয়, কত রাতের ঘুম-নির্ঘুম চলে যায়, কিংবা কত মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

অদৃশ্য সংগ্রাম ও ত্যাগ: সাংবাদিকরা অনেক সময় পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব থেকে দূরে থাকেন। তাদের দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম, ঝুঁকি নেওয়া, মানসিক চাপ সহ্য করা এসব সবই সাধারণ মানুষের চোখে অদৃশ্য। মানুষ শুধু ফলাফল দেখে, প্রক্রিয়া বোঝে না।

সাহস ও সততার প্রতি বোঝাপড়া: যে সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিক নিজের জীবন বা মানসিক শান্তি ঝুঁকিতে ফেলে, তা অনেক সময় সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না। তারা হয়তো সাংবাদিককে শুধু খবরদাতা হিসেবেই মনে করেন, কিন্তু পেছনের সাহস, দায়িত্ববোধ ও ত্যাগের মাত্রা বোঝা খুব কমই দেখা যায়।

সাংবাদিক ও সমাজের সম্পর্ক: সাংবাদিকরা সমাজের চোখ ও কণ্ঠ হয়ে কাজ করেন। তারা অন্যদের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। কিন্তু সমাজ প্রায়শই শুধুমাত্র তথ্যের দিকে মনোযোগ দেয়। ফলে সাংবাদিকদের নিঃশব্দ সংগ্রাম, অদৃশ্য দুঃখ এবং মানসিক চাপ চোখে পড়ে না, কথায় প্রকাশ হয় না। ফলে, সাধারণ মানুষের চোখে সাংবাদিকরা এক ধরণের তথ্যপ্রদানকারী বা মিডিয়ার অংশ হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তারা অজস্র সংগ্রাম, ঝুঁকি, মানসিক চাপ এবং নিঃশব্দ বেদনার সঙ্গে লড়াই করছেন। সমাজ এই দিকটি বোঝার চেষ্টা করলে সাংবাদিকতার গুরুত্ব আরও প্রকটভাবে দেখা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়: সাংবাদিকরা সমাজের জন্য সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তাদের কাজের গুরুত্ব ও ঝুঁকি প্রায়শই সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে যথেষ্ট স্বীকৃতি পায় না। তাদের দুঃখ–কষ্ট চোখে পড়ে না, কথায় প্রকাশ হয় না, অথচ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সাংবাদিকদের প্রতি দায়িত্ব থাকা খুবই জরুরী।

সাংবাদিকদের সামাজিক গুরুত্ব: সাংবাদিকরা সমাজের চোখ, কান ও কণ্ঠ। তারা জনসাধারণকে তথ্য প্রদান করেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করেন। যদি সাংবাদিকদের কাজের প্রতি সমাজ সচেতন না হয় বা তাদের সমর্থন না দেয়, তাহলে সমাজের তথ্যপ্রাপ্তি ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব: সরকার ও প্রশাসন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে দায়িত্বশীল। নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নির্যাতন বা সাংবাদিকদের ওপর হুমকি-এসব যদি সরকারের পর্যাপ্ত নজর না পায়, তাহলে সাংবাদিকরা নিরাপদে কাজ করতে পারেন না। এ কারণে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তাদের স্বাধীনতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

সাংবাদিকদের জন্য সহায়তা ও সম্মান: সমাজ এবং রাষ্ট্র সাংবাদিকদের মানসিক চাপ, ঝুঁকি ও দুঃখ বোঝার চেষ্টা করলে তারা আরও দক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন। যথাযথ প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সামাজিক সম্মান,এসব সাংবাদিকদের জন্য সহায়ক। এগুলো না থাকলে সাংবাদিকদের মানসিক চাপ, দুঃখ এবং অদৃশ্য সংগ্রাম আরও বৃদ্ধি পায়।

অদৃশ্য দুঃখের স্বীকৃতি: সাংবাদিকরা প্রত্যেকদিন অদৃশ্য সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সমাজের জন্য কাজ করেন। তাদের দুঃখ-কষ্ট, ঝুঁকি ও নিঃশব্দ ত্যাগকে সমাজ ও রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলে,সাংবাদিকরা আরও অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এটি শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য কল্যাণকর। ফলে, সাংবাদিকদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো- তাদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং সম্মান নিশ্চিত করা। এভাবে তাদের অদৃশ্য দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও হ্রাস করা সম্ভব এবং সাংবাদিকতা সমাজের জন্য আরও শক্তিশালী হবে।

ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতা ও আশার আলো: যদিও সাংবাদিকদের জীবন কঠিন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং মানসিক চাপপূর্ণ, তবু ভবিষ্যৎ সাংবাদিকতা আশার আলো দেখায়। নতুন প্রযুক্তি, ডিজিটাল মাধ্যম এবং সমাজের বেড়ে চলা, সচেতনতা, সাংবাদিক পেশাকে আরও শক্তিশালী ও প্রভাবশালী করছে।

প্রযুক্তির সহায়তা: ডিজিটাল মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন নিউজপোর্টাল এসব সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ, যাচাই এবং প্রচারের পদ্ধতিকে সহজ করেছে। তারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে খবর পৌঁছে দিতে পারেন। প্রযুক্তি সাংবাদিকদের দৈনন্দিন চাপ কিছুটা হ্রাস করেছে এবং সমাজের কাছে তাদের কাজকে আরও দৃশ্যমান করে তুলেছে।

সচেতন সমাজ ও শিক্ষিত জনতা: ভবিষ্যতে সমাজের মানুষ আরও সচেতন হবে, সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট, সংগ্রাম এবং সাহস বুঝতে পারবে। শিক্ষা ও জনসচেতনতার বৃদ্ধি সাংবাদিকদের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমর্থন বাড়াবে। এটি সাংবাদিকদের মানসিক চাপ কিছুটা হ্রাস করতে সাহায্য করবে।

পেশাগত প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা: নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা আধুনিক প্রযুক্তি, আইন ও নৈতিক দিক সম্পর্কে ভালোভাবে প্রশিক্ষিত। পাশাপাশি সরকার ও সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর্থিক সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করলে সাংবাদিকদের জীবন ও পেশার মান উন্নত হবে।

সাহস ও দায়িত্বের নতুন প্রজন্ম: যদিও সাংবাদিকদের জীবন কঠিন, তবুও নতুন প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে সাহস, উদ্যম এবং দায়িত্ববোধ। তারা পেশাগত নিষ্ঠা ও সত্য প্রকাশের জন্য নতুন উদাহরণ স্থাপন করছেন। এটি সাংবাদিক পেশার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করছে।

আশার দিক: ভবিষ্যতে সাংবাদিকরা তাদের দুঃখ-কষ্ট, ঝুঁকি এবং মানসিক চাপের সঙ্গে আরও দক্ষভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। যদি প্রযুক্তিগত সহায়তা, সমাজের সচেতনতা এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা মিলিয়ে সাংবাদিকতা হবে আরও শক্তিশালী, স্বাধীন এবং সমাজের জন্য অপরিহার্য। ফলে, সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ আলোকিত হবে। যদিও দুঃখ ও সংগ্রাম অদৃশ্য থাকে, তবে সাহস, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সমাজের সমর্থনের মাধ্যমে সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের মিশন সফলভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন।

উপসংহার: সাংবাদিকরা সমাজের জন্য সত্য প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন। তারা দুর্ঘটনা, অস্থির পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক চাপ এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করেন, তথ্য সংগ্রহ করেন এবং জনসাধারণের কাছে সত্য পৌঁছে দেন। কিন্তু এই নিঃশব্দ সংগ্রামের ফলে সাংবাদিকদের দুঃখ–কষ্ট চোখে পড়ে না, কথায় প্রকাশ হয় না।

সাংবাদিকদের জীবনে মানসিক চাপ, পারিবারিক ত্যাগ, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি নিয়ে পরিপূর্ণ। তারা কখনো কখনো নিজের স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবারের সুখ ত্যাগ করেন, শুধু সমাজের জানার অধিকার পূরণের জন্য। সাধারণ মানুষ সংবাদ দেখে শুধু তথ্য গ্রহণ করেন, কিন্তু এর পেছনের সংগ্রাম বোঝেনা।

তবে সাংবাদিকরা সাহস, দায়িত্ববোধ এবং সততার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যান। তারা ঝুঁকি উপেক্ষা করে সত্য প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন। রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবার তাদের সহায়তা করলে, সাংবাদিকদের জীবন ও পেশা আরও উন্নত ও নিরাপদ হবে। প্রযুক্তি,প্রশিক্ষণ এবং সচেতন সমাজের সমর্থন সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী করবে। ফলে, সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট অদৃশ্য হলেও, তাদের সংগ্রাম সমাজকে সত্যের পথে এগোতে সাহায্য করে। তাদের নিঃশব্দ ত্যাগ, সাহস এবং দায়িত্ববোধ সমাজের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। সাংবাদিকরা চিরকাল সমাজের চোখ, কান এবং কণ্ঠ হয়ে সত্য উদঘাটন করে যাবেন-এটাই তাদের মহৎ দায়িত্ব এবং গৌরব।

লেখক: সাংবাদিক
মোবাইল: 0183-5550 333

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top