রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ আজ দৃশ্যমান হতে পারে : বিএনপি-জামায়াতের বাইরে ‘তৃতীয় বলয়’ গঠনে চেষ্টা

BJ-J.jpg

সীমান্ত চৌধুরী ।।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে মূলত বড় দুইটি দলকে ঘিরেই রাজনীতিতে সব হিসেব কষার চেষ্টা চলছে। বিএনপি ও জামায়াত বড় এ দুই ক্ষমতা যাওয়া নিশ্চিত করতে দলীয় আদর্শের বাহিরে গিয়েও নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করছে। ফলে ভোটের মাঠে .০৫ শতাংশ ভোটও যাদের নাই বা একক নেতা সর্বস্ব দলকেও আসন ছাড় দিয়েও ভাগে রাখার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে আসন ছাড়তে জামায়াতের যতোটা সহজ বিএনপির ততোটাই কঠিন। কারন বিএনপি যে আসনটি ছাড় দিতে হবে সেই আসনে যাকে ছাড় দিবে তার ভোটের শতগুণ বেশি ভোট আছে বিএনপির। ফলে বিএনপি স্থানীয় নেতা বিখত সময়ের আওয়ামী লীগের মতো সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যায় তাহলে ছাড় দেয়া খুচরা দলের নেতার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতির ময়দানে দৃশ্যমান সক্রিয় দলগুলো এখন মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত, যার মধ্যে বড় সংখ্যক দল ব্যস্ত বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের আলোচনায়। বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই নবগঠিত এনসিপিকেও পাশে টানার চেষ্টা করছে। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে এনসিপি জামায়াত এখন বাকযুদ্ধে লিপ্ত আছে। এতে আপাতত মনে হতে পারে এনসিপি জামায়াতের সাথে যাবে না। কিন্তু রাজনীতিবিদরা বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নাই।

বিএনপি ইতোমধ্যে নিজেদের দলের ২৫০ আসনে দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে। বাকি ৫০ আসনে ভোটর জোটের প্রার্থীদের দেয়ার পর দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, নূরের গণ অধিকারকে ১২টি আসনে ছাড় দিয়েছে। এছাড়া এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতাদের আসনে এখনো দলীয় প্রার্থী ঠিক করেনি। বিএনপি এনসিপিকে ভালো আসন ছাড় দিতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে।

অন্যদিকে ইসলামপন্থি কয়েকটি দল পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করছে। তাদের মধ্যকার এ সমঝোতা নির্বাচনী জোটে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

দৃশ্যমান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও জামায়াত বড় এ দুই দলের বলয়ের বাইরে গিয়ে তৃতীয় আরেক দুইটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকটি দল ও সংগঠন মিলে। এর একটি উদ্যোগে রয়েছে দুটি দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। তৃতীয় এই বলয়ে থাকা দল ও সংগঠনগুলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এ ধরনের তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের বাস্তবতা দেখছেন।

এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং আপ বাংলাদেশ এই ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে এরই মধ্যে একাধিকবার বৈঠক করেছে তিন দলের শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা এখন যৌথভাবে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও সংস্কারের আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সহায়ক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাওয়া দলগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনাই তাদের মূল লক্ষ্য।

এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা থেকে গড়ে উঠা সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণঅধিকার পরিষদসহ নতুন ও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বাদে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্য ৫টি দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির সঙ্গেও আলোচনা চলছে।

তৃতীয় বলয় তৈরির যে চেষ্টা, তার আভাস পাওয়া গেছে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐক্য: ক্ষমতা না জনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা।

যাতে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. বদিউল আলম মজুমদার, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান কাইয়ূম অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

প্যানেল বক্তা হিসেবে থাকবেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন, আপ বাংলাদেশের আহবায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি এবং আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত। আমন্ত্রণপত্র থেকে জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, আর সঞ্চালনা করবেন আপ বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা।

নতুন এই উদ্যোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আপ বাংলাদেশের আহবায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এবং জামায়াতের বাইরে আমরা তৃতীয় একটি বলয় তৈরির চেষ্টা করছি। এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং আমরা এই উদ্যোগের কাছাকাছি আসছি। এনসিপি, গণঅধিকারসহ সকলকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জন্য আলাপ চলছে। বিএনপি, জামায়াত ছাড়া সবার সঙ্গেই আমরা এই আলোচনায় যাব। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চাহিদার আলোকে আগামী নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়েও আমরা রাজনীতির মাঠে ভূমিকা রাখতে চাই।’ একই ধরণের তথ্য জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নির্বাচনী এই জোটের সম্ভাবনা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃতীয় বলয়ের এই উদ্যোগ সফল হলে আগামী নির্বাচনে দেশের রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে এবং তা নির্বাচন পরবর্তী সময়েও সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top