যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন, আমাদের সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

Yunus_NM24.jpg

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে যত চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন, আমাদের সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। ২০ আগস্ট বুধবার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির নিমিত্ত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অসংক্রামক রোগ দিনদিন বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিপুল জনগোষ্ঠীর ছোট এলাকায় বসবাসের প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতি আরও সংকটময়। তাই এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা শুধু স্বাস্থ্যখাত নয়, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত।

ড. ইউনূস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে এবং এর মধ্যে শতকরা ৫১ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সের নিচে, যাকে আমরা অকাল মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। আমাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) উনসত্তর শতাংশ, যার বেশির ভাগ অসংক্রামক রোগের জন্য ব্যয় হয়।

যৌথ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু নিয়ে আমরা সকলে আজ একত্রিত হয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ বলছি এ কারণে যে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানব সম্পদ দরকার। দক্ষ ও কর্মক্ষম মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে জাতীয় উন্নয়ন- কোনোটাই যথাযথভাবে করা যাবে না। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন এবং যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন, আমাদের সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে।

এজন্য সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা- সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ হলে মানুষ উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়। কোনো ব্যক্তির ক্যান্সার হলে তার পরিবারকেআর্থিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই সহায়হীন-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হয়। আমাদের বিপুল অঙ্কের টাকা চলে যায় বিদেশে এ সব রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে। তাই অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা যেমন উন্নত হওয়া জরুরি, তেমনি রোগগুলো যেন কম হয় অথবা না হয়, সেজন্য উপযুক্ত জনসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করে তোলা দরকার।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এজন্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার। খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত এমন প্রত্যেকটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যেক খাত থেকে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নিবিড় উদ্যোগ। তাই এ সকল মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবুও আমি ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে কয়েকটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে চাই।

তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ সচেতনতা আছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। অনেকেই সচেতন থাকলেও জীবন যাপনে হয়ত সেভাবে প্রতিফলন নেই। ফলে নানামাত্রিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি দরকার বেসরকারি উদ্যোগ। দরকার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কারিগরি সহযোগিতা। আমি বিশ্বাস করি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল প্রয়োগ করে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়ন সহজ হবে। আমি আশা করছি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। স্বাক্ষরকারী মন্ত্রণালয়গুলো সহযোগিতা করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেবে।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটরিং ও মূল্যায়ন আবশ্যক। আবার এগুলো করতে দরকার উপযুক্ত ও দক্ষ জনবল, আর্থিক বরাদ্দ। আমি এ দিকটা বিবেচনায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা‘যৌথ ঘোষণা’ বাস্তবায়নের কাজটি বিশেষ অগ্রাধিকারে রাখবেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও জনবল নিশ্চিত করবেন যেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না হয়।

তিনি বলেন, ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম। এটি শুধুমাত্র একটি আয়োজনের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। আমি বিশ্বাস করি, এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এটি হবে অগ্রগতির একটি নতুন মাইল ফলক। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও এসডিজি পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডাসমূহ অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে অর্জনে সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top