মিয়া মোহাম্মদ মাকছুদ ।।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণ দলীয় শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে দলটি। তৃৃণমূল নেতাকর্মীদের সমস্যা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ সব স্তরের কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
এসব কমিটি পুনর্গঠনে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতারা যাতে বাদ না পড়েন, সে ব্যাপারে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশ। কিন্তু নবগঠিত কমিটিতে মাইম্যানকে পদ-পদবীতে মরিয়া জেলার সিনিয়র নেতা ও নবগঠিত কমিটির জেলার নেতারা। নোয়াখালীতে বিএনপির কোন্দল নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই কোন্দল তৈরী করছেন!
নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি নিশ্চত না হলে, প্রয়োজনে আন্দোলন করবে বিএনপি। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের মতামত ও পরামর্শসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হাইকমান্ডের নির্দেশে নোয়াখাল জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে প্রথমে ৫ জনের আংশিক কমিটি করা হয়। সেই ৫ জনের আংশিক কমিটি পরবর্তীতে গত ৬ মে জলার পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলের মাঠ পর্যায়ে কোন্দল আরো চরম কারে সামনে আসে। দাবি উঠে স্বজনপ্রীতির। জানা গেছে গত ১৬ বছরে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো না এমন লোককেও জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এমনকি বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আজম খানে পরামর্শও আমলে নেয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবেদ চৌধুরী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী নাছিরের ছাপে কমিটিতে কিছু লোক জায়গা পেয়েছে বলে জেলার দায়িত্বশীল এক নেতার। আবার জেলার সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারীর কোন রকম পরামর্শ বা মতামত না নিয়েই পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
নোয়াখালী জেলার দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, জেলা উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। কমিটি গঠন দ্রুতই শেষ করা হবে। যেসব এলাকায় কোন্দল রয়েছে তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা দলে কোন্দল সৃষ্টি করবে বা জিইয়ে রাখবে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে কোন্দল সংশ্লিষ্টরা দলীয় পদ-পদবী হারাতে পারেন এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ সহনীয় না হলেও দলের হাইকমান্ডকে জানানো হবে। দলীয় হাইকমান্ড বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আজম খান ছাড়া কোন কেন্দ্রীয় নেতার চাপ মেনে না নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতারা বাড়াবাড়ি করলে দলীয় পদ হারাতে পারেন বলে আশ্বস্থ করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
সংগঠনক শক্তি থাকলে আগামী নির্বাচন যে কোনো পদক্ষেপই সফল হওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে আছে। এ ছাড়া কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।
এছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে এসব কোন্দল নিরসন সম্ভব না হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নেতাদের এমন মতামতের পরেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলের হাইকমান্ড। পুনর্গঠনের সর্বশেষ অবস্থা অবহিত হয়ে দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি।
হাইকমান্ডের সাথে বৈঠকে একাধিক নেতা মতামত দেন, ঢাকায় বসে দল পুনর্গঠন করলে চলবে না। তৃণমূলে গিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি করা উচিত। এতে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও কমবে। ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে এক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দল গোছানো উচিত।
তবে তৃর্ণমূলের নেতারা চান, দল যাতে নির্বাচননির্ভর অর্থাৎ এমপি নির্ভর না হয়ে পড়ে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের জেলা বা তৃণমূলের দায়িত্ব না দেয়ার পক্ষে মত দেন মাঠের নেতারা। তবে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অনেক স্থানে হয়তো এভাবে কমিটি করা সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা উচিত। যাতে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা তার বিরোধিতা না করেন।
আবার দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল বিশেষ করে সংসদীয় আসনের নেতাদের মতামত নেয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। অতীতে দেখা গেছে, যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন তাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে অচেনা কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকর্মীরা নির্বাচনে নামেননি। তাই ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে চেয়ারপারসনের প্রতি অনুরোধ জানান ওই নেতা।
মাঠের নেতারা অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর কিছু নেতার চাদঁবাজি ও দখলবাজি দলকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ৫ আগস্টের আগে যাদের সংসার চলতো মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের আর্থিক টাকায় তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এরাই আবার দলের পদ কিনতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচনে যেমন গত ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে থাকার মূল্যায়ন করতে হবে। তেমনি ৫ আগস্টের পরের চাদঁবাজি ও দখলবাজি কিছু নেতাকে দূরে রাখতে হবে।
মাঠ পর্যায়ের কোন্দলের কারণে নোয়াখালীতে দলের সাংগঠনিক শক্তি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কোন্দল জিইয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছেন বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। দলের জেলা উপজেলায় বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে শিগগির মীমাংসা করা এবং যারা দলে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে কড়া হুশিয়ারি দেন হাইকমান্ড।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, কোন্দল মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে যাতে কোনো দুর্বলতা না থাকে সে জন্য এখন থেকে সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। দলে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদেরকে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন এবং আন্দোলন উভয়ের জন্য দল শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া যেসব এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান করা হবে। আগামী নির্বাচনে দলের পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চাই আমরা।
তবে মাঠের নেতাদের দাবি কোন্দল তৈরী করে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারা কেন্দ্র ও জেলার নেতাদের উপর করে অর্থনৈতিক প্রভাবে দলীয় নেতৃত্ব বিভাজন তৈরী করে। এমন অভিযোগ রয়েছে দলের সাবেক এমপিদের অনেকের বিরুদ্ধেই। তারা মাইম্যান না এমন দলের অনেক নিবেদিত এবং জনপ্রিয় বিএনপি নেতাদেরকে দলীয় কার্য্যক্রমে নিষ্কিয় করে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপির নেতা জানান, যাদেরকে বিএনপির কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনিই দলে কোন্দল তৈরী করছেন। তবে কি করে বিএনপির কোন্দল নিরসন হবে? সদ্য গঠিত নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে নজর দিলেই দলীয় কোন্দল দৃশ্যমান হব।