মিয়া মোহাম্মদ মাকছুদ ।।
নোয়াখালী ৫ আসনে বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর তালিকা দিন দিন তামাশার পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। তালিকটি দিন দিন এতবড় হচ্ছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতারা প্রার্থীর নাম বলতেও শরম পাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী ৫ আসনে প্রার্থী হিসেবে ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও এরা কেউই নিজ থেকে কখনো প্রার্থী হবেন এমন ঘোষণা দেননি। বলেননি আমি প্রার্থী। কিন্তু একেকজন একেক সময়ে কিছু স্থানীয় নেতার উপর ভর করে নিজেকে উপস্থাপন করছেন।
তবে ফেইসবুক সাংবাদিকদের কল্যাণে স্থানীয় লোকজন এসব প্রার্থীদের নাম সকাল বিকাল গিলছে আর ওগলছে। যদিও বর্তমান বাস্তবাবতায় এদের বেশিরভাগ প্রার্থীরই ভোট করার মতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগ্যতা নাই। এমনকি নিজ দলেও গ্রহণযোগ্যতা নেই।
অবশ্য স্থানীয় ও জাতীয় কিছু পত্রিকাও নিউজ করছে। এসব পত্রিকার সংবাদদাতারা নিউজ করার আগে আমাকে ফোন করে জানতে চায়। আমিও প্রার্থী তালিকা বলতে অনেক লজ্জা পাচ্ছি। তবে মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার তো সবারই আছে।
নোয়াখালী ৫ আসন নিয়ে আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে তাতে এই আসনটি স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই ভিওআইপি আসন হিসেবে খ্যাত। এই আসনে ১৯৭৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ওবায়দুল কাদের জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন। এরা দুজনই জাতীয় নেতা ছিলেন। ফলে এরা নির্বাচিত হলেই মন্ত্রী হতেন। ফলে নোয়াখালী ৫ আসন মন্ত্রীর আসন বলেও খ্যাত ছিলো। এদের সময়ে বিএনপি আওয়ামী লীগের কেউই নিজেদের শখ পূরণ করতে পারেনি।
ছোট দলগুলোর কিছু নেতা এসব ভিআইপি প্রার্থীর সাথে নির্বাচন করার সুযোগ পেলেও বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতারা নিজের ইচ্ছাকে মাটি চাপা দিয়েছেন বিগত ৫০ বছর।
নোয়াখালী ৫ আসন বেশিরভাগ সময়ে দখলে ছিলো আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪,২০১৮ এবং ২০২৪ এর সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এরপরেই ছিলো জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে। জাতীয় পার্টি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এসময়ে কোম্পানীগঞ্জের কৃতিসন্তান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপ-প্রধান মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী ও উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি ১৯৭৯ ও ২০০১ সালে নোয়াখালী ৫ আসনে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। বিএনপির এই মেয়াদেও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তবে ১৯৯৬ এর একদলীয় নির্বাচনে ১৫ দিনের বিএনপির ছিলেন কর্ণেল (আব.) এনামূল হক।
তবে নোয়াখালী ৫ আসনে এবারো একজন ভিভিআইপি প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুস জাহের। তিনি শারিরিকভাব ভোট করার মতো অবস্থায় নাই। অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুস জাহের ভোট করলে এলাকার মানুষ বর্তমান অবস্থায় দলমত নির্বিশেষে তাকে এমপি নির্বাচিত করতেন। তিনি এমপি হলে মন্ত্রীও হতেন।
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের আত্মগোপনের পর বিএনপিসহ কিছু ধর্মীয় দলের এসব নেতারা নোয়াখালী আসনের মাঠে সরব হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে জামায়াত, খেলাফত মজলিস ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এরা সবাই মূলত নামসর্বস্ব প্রার্থী। জামায়াতের প্রার্থী এর আগে ইউপি নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির অনেকের খায়েস আছে। তারা নিজেকে প্রকাশ করছেন। মনোনয়ন না পেলেও কিছুটা পরিচিতি তো পাবে । তাদের এই খায়েসে ফেইসবুক সাংবাদিকদের পকেট ভরছে। আর বিএনপির নেতারা কর্মীদের মাথা বিক্রি আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন কিছু বিএনপি নেতা।
দলীয় মনোনয়ন দলের বা দলের নয় এমন যে কোনো মানুষই চাইতেই পারে। কিন্তু যাদের কে বিএনপির দূর্দিনে দেখেনি তারা এখন বিএনপি কান্ডারি হতে চায় এটা দেখে কর্মীরা হাসছে।
নোয়াখালী ৫ আসনে ইতোমধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মরহুম মওদুদ আহমদের সহধর্মিণী হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফোরকান-ই আলম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল, জেদ্দা বিএনপির নেতা কিসমত উল্যাহ চৌধুরী, ছাত্রদল সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন নাসির, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আবছার বাহাদুর, আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ কাজল, কানাডা প্রবাসী জিয়াউল হক জিয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভিন কাউছার মুন্নী। এরকম হয়তো বা আরো অনেকের নাম শুনবেন। সময়তো এখনো অনেক আছেই।
তবে মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর নোয়াখালী ৫ আসনে একমাত্র মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ছাড়া আর কাউকে দলের নেতাকর্মীদের পাশে দেখা যায়নি। তবে দলের দায়িত্বে থাকায় গোলাম হায়দার বিএসসি ও ফোরকান-ই আলমও দলের পাশে ছিলেন।
তবে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং দলের মনোনয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে তারেক রহমান একাধিক জরিপ চালিয়েছেন। এতে মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় প্রার্থীকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মাঠ জরিপসহ সবদিক বিবেচনা করেই তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নিবেন।
এখনতো সবার খেলার বা খেলা দেখার অধিকার আছে। অতএব খেলারাম খেলে যা…..