নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির দলীয় আধিপত্যের লড়াইয়ে জ্বলন্ত উনুনে পুড়ছে মানুষ

char-elahi-gat.jpg

চর এলাহী ঘাট। ফাইল ছবি

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি ।।

৫ আগস্টের পরে নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়ন যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে উঠেছে।  আওয়ামী লীগের পলায়নের পরে খালি মাঠ পেয়ে বিএনপির চাঁদাবাজ-দখলবাজ নেতারা হায়নার মতো ঝাপিয়ে পড়ে নিজেদের আখের গোছাতে। যারা ৫ আগস্টের একদিন আগেও গর্তে ছিলো। একদিন আগে কেন ৫ আগস্টের দিনের মধ্যভাগ পর্যন্তও একটা বিএনপিও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করেনি।

অথচ ৫ আগস্টের পরের দিন থেকে বিএনপির এসব নেতারা শুধু চর এলাহী কেন, কোম্পানীগঞ্জের সর্বত্র এক প্রকার লুটতরাজ চালায়। চলে চাঁদাবাজী-দখলবাজী। চর এলাহী ইউনিয়নের ঘাট, মাছের ঘের, চাষের জমি, খামার বাড়িসহ মানুষের বসত বাড়ি এমনকি দোকান ঘরও। বালু মহল তো রয়েছেই। এক কথায় সর্বত্রই চলছে মবের রাজত্ব। এই দৃশ্য শুধু চর এলাহী ইউনিয়নে নয় বরং কোম্পানীগঞ্জের সব ইউনিয়নে চলমান ছিলো আছে। বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ যেন জ্বলন্ত উনুনে পুড়ছে।

৫ আগস্টের পর কোম্পানীগঞ্জ যেন লুটপাটের উৎসবে পরিনত হয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছে আগে এক মির্জার নির্যাতন সহ্য করতে হতো, এখনতো এক ডজন মির্জার দৌরাত্ম চলছে। সংবাদ মাধ্যম আগে এক মির্জার রোষানলে ছিলো এখন তো অনেক মির্জার দাঁতের নিচে অসহায়ের মতো পড়ে আছে। এখন লিখলে বা বল্লে আপনি আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে দিচ্ছে। অথচ ১৫টি বছর বিএনপি-জামায়াতের এসব নেতারা কোম্পানীগঞ্জ কোন আন্দোলন সংগ্রাম হবে না এমন শর্তে মির্জা থেকে মাসোয়ারা নিয়ে পরিবার চালাতেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা মির্জার দেয়া অর্থে ভোটও করেছে এমন কথা শোনা গেছে।

কোম্পানীগঞ্জের বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ৫ আগস্টের আগে যাদের গাল ছিলো খাল খাল অথচ ৫ আগস্টের পরে তাদের গাল এখন তাল তাল। চেহারা তেল তেলে। শরীরে মেদ জমেছে, যাহা দৃশ্যমান। ৫ আগস্টের আগে যাদের রিক্সায় চলার অবস্থা ছিলো না, তারাই এখন কার-মাইক্রো-পাজেরোতে চড়ে। ৫ আগস্ট যেন এক আলাদিনের চেরাগের নাম।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হলো চর এলাহী ইউনিয়ন। রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনসহ কয়েকজন সাংবাদিক’র বিরুদ্ধে চর এলাহী ইউনিয়ন থেকে সুবিধাভোগের কথা এখন সর্বত্র চলমান। গত কয়েকদিনে ফেইসবুকে কিছু অডিও কলের রেকর্ড ভাসমান। এসব অডিও কলে বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। এসব বিষয় আগে গোপনে থাকলেও এখন পাবলিক হয়ে গেছে। তারপরও নোয়াখালী জেলা বিএনপি ও কোম্পানীগঞ্জ প্রশাসন নীরব কেন? এমন প্রশ্ন সর্বত্র। নাকি সর্ষেও ভুত আছে!

৫ আগস্টের পর থেকেই চর এলাহী ইউনিয়নে চলমান অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ চলে আসছে। এসব অভিযোগ নতুন কিছু নয়। স্থানীয় ও উপজেলা বিএনপির অতি লোভ ও স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতায় চর এলাহী ইউনিয়নসহ পুরো কোম্পানীগঞ্জই আজ বিষপোঁড়ায় পরিনত হয়েছে। প্রথম দিকে নির্যাতনের খড়ক ছিলো আওয়ামী লীগের উপর, এখন সেটা আম জনতার গাঁড়ে পড়েছে। এসবের দখল নিতে প্রাণ যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদেরও।

তবে সম্প্রতি স্থানীয় সূত্রের বরাতে উঠে এসেছে অনেক উদ্বেগজনক তথ্য, কোম্পানীগঞ্জের এসব অবৈধ অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং কিছু সাংবাদিক আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে তা শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতি নয়, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামো ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

স্থানীয়দের দাবি, চর এলাহীতে বালু, খেয়াঘাটে ও মুছাপুরে নদী ভাঙ্গন, নদী শাসনে ও বালু উত্তোলন এবং চর পার্বতীতে নদী শাসনে ও উন্নয়ন প্রকল্পে অবৈধ অনৈতিক কার্যক্রম ও লুটপিট চলমান রয়েছে, এবং এসব থেকে বিএনপির প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নিয়মিতভাবে নগদ অর্থ নিচ্ছে। অথচ এসব অনৈতিক ও অবৈধ কার্যকলাপ রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতকিছুর পরেও কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসন নিরব কেন?

কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির দলীয় কোন্দল ও চাঁদাবাজী দখলবাজীর আধিপত্যের বিরোধে আগে দুইটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। কয়েকদিন আগে চর এলাহী ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য দিবালোকে বসুরহাট সরকারি হাসপাতালের সামনে জবাই করার চেষ্টা করেছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায়, মুখে, গাঁড়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে, শাহাবুদ্দিন এখন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।  শাহাবুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হত্যা চেষ্টার সাথে জড়িতদের নাম বলেছে, যাহা প্রশাসন ও জেলা বিএনপির দৃষ্টি এড়িয়ে জেছে বলে মনা হচ্ছে না। এরপরও এ বিষয়ে থানায় মামলার তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন একজন অপরাধীও গ্রেফতার হলো না? প্রশাসন নীরব কেন?

একই সন্ত্রাসীরা গতকাল ২০ আগস্ট বুধবার আবারো চর এলাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেনের ছেলেকে আবারো তাদের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টায় কুপিয়েছে। এরপরও কী কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন কোন কার্যকর ভূমিকা নিবে না।

অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির নেতাদের আধিপত্যের লড়াইয়ে চলমান দলীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপিও কোন কার্যকর কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া নি কেন? কোম্পানীগঞ্জের বিএনপির সাংগঠনিক অভিভাবক নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতি জিজ্ঞাসা। নাকি এসব অনৈক অর্থের ভাগ জেলা পর্যন্ত পৌঁছ!

কোম্পানীগঞ্জের এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন এবং সচেতন মহলের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে অবিলম্বে সত্যিকারের অপরাধীদের আইনে আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে কেউ এমন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সাহস পাবৈ না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top