ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রার্থীর যোগ্যতা, মনোনয়নপত্রের দাম কত?

597947202_1622692219112109_7395975035103817464_n.jpg

মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি অবশ্যই কিনতে হবে।

সীমান্ত চৌধুরী ।।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন; রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের কাজও শেষ। ১২ ফেব্রুয়ারির এ নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা এখন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।

মনোনয়নপত্র কিনতে অর্থ না লাগলেও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার তালিকার সিডি কিনতেই হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডের সিডির জন্য ৫০০ টাকা ট্রেজারি চালান কিংবা পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

এজন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায় থেকে অথবা রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় নির্বাচনি এলাকার আওতাধীন প্রতি ইউনিয়ন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের (যদি থাকে) জন্য ৫০০ টাকা হারে এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ৫০০ টাকা হারে ট্রেজারি চালান কিংবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ট্রেজারি চালানের কোড নম্বর ১০৬০১০১১০০১২৫-১৪২৩২৫৩।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি সময়সূচি জারি, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, সময়সূচির গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা, নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা এবং ছবিসহ ও ছবিছাড়া ভোটার তালিকার ব্যবহার নিয়ে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ মোহাম্মদ মনির হোসেনের সই করা এ সংক্রান্ত পরিপত্র সব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ৪ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করা যাবে আগামী ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত, ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে আপিল নিষ্পত্তির কার্যক্রম, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ শেষ হবে ২০ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি এবং ১২ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা
নির্বাচন পরিচালনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর নির্বাচনি এলাকার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং অন্যান্য নির্বাচনি এলাকার জন্য জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ উপজেলায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ), সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, তেজগাঁও সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন), সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অধিক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা আইন ও বিধি মোতাবেক রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সব ধরনের সহায়তা দেবেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে থেকে প্রয়োজনবোধে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

কোথায় মিলবে মনোনয়নপত্র
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল জারির পর আসনভিত্তিক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। অফিস চলাকালীন সময়, অর্থাৎ সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিনসহ মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী সরাসরি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তিটি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার দর্শনীয় স্থানে টাঙ্গিয়ে জারি করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

কারা প্রার্থী হতে পারবেন, কারা পারবেন না
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিষয়ে সংবিধানের ৬৬(১) (২) ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।
ফেরারি আসামি হলে ভোটে অংশ নিতে পারবেন না, এমন বিধান এবার যুক্ত করা হয়েছে। ঋণখেলাপি ও বিল খেলাপিকে মনোনয়ন জমার আগেই তা পরিশোধ করতে হবে।

নির্বাচনে যারা অযোগ্য বলে গণ্য হবেন;
আদালত ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষণা করলে, প্রজাতন্ত্রের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের লাভজনক পদে থাকলে, কোম্পানীর পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হলে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ বা তার কোন কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে পরিশোধে ব্যর্থ হলে, কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে ব্যাংক থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবার বিল পরিশোধ না করলে। প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর সই করা হলফনামায় সবশেষ কর বছরের আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত করতে হবে।

লাভজনক পদ বা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের প্রার্থী হতে হলে
লাভজনক পদ অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সরকারের শতকরা ৫০ ভাগের অধিক শেয়ার থাকলে, কোনো কোম্পানির কোনো অফিসে সার্বক্ষণিক কোনো পদ বা পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকা ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।

এছাড়া উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনসমূহে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে পদত্যাগ করতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হতে পারবেন না। যদি কোন ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থী হন, তাহলে সব নির্বাচনি এলাকার জন্য তার সব মনোনয়নপত্র বাতিল হবে।

ভোটের ব্যয়ের জন্য ব্যাংক হিসাব
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, এবার প্রার্থীরা ভোটার প্রতি ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আড়াই লাখ ভোটার বা তার কম এলাকার প্রার্থীরা ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন; আর তার বেশি ভোটার হলে ভোটার প্রতি ১০ টাকা হারে নির্বাচনি ব্যয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। ঢাকা-১৯ আসনে দেশের সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে; প্রায় ৭ লাখ ৮ হাজার। এ আসনের প্রার্থীরা ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ পাবেন।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচনি এজেন্ট নিয়োগ করা না হলে প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য (ব্যক্তিগত ব্যয় ব্যতীত) তফসিলি ব্যাংকে পৃথক হিসাব প্রয়োজন হবে। এ ব্যাংক হিসাব থেকে নির্বাচনসংক্রান্ত ব্যয়ের সব অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিলের সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী এবং প্রার্থীর সম্পদ, দায়-দেনা ও তার বাৎসরিক আয়-ব্যয় বিবরণী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করার বিধান রয়েছে।

ছবিসহ ও ছবিছাড়া ভোটার তালিকার ব্যবহার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করতে হবে। শুধু নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন।

তবে প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টকে ছবিছাড়া ভোটার তালিকার সিডি কিনতে হবে এবং মুদ্রণ করে ব্যবহার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top