চাঁদাবাজ রিয়াদ। সংগৃহীত ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
গতকাল ২৯ জুলাই রাত ১১ টায় বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি উদ্ধার করে পুলিশ। আগামী মাসের দুই তারিখে ওই চেকটি ক্যাশ হওয়ার কথা ছিল। তবে পুলিশ এখনো পুলিশ এই অভিযোনের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোন বক্তব্য দেয়নি।
গুলশানে আওয়ামী পন্থী এক ব্যবসায়ীর জমি উদ্ধারে ৫ কোটি টাকা চুক্তি হয়েছিল রিয়াদের সঙ্গে। সেই চুক্তির দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেনে চেক ছিল রিয়াদের ঘরে। এছাড়াও পুলিশ তার ঘর থেকে অন্তত ১০টি এফডিআররের কাগজ পেয়েছে। যেগুলোতে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা করে রাখা আছে।
গত কয়েকমাসে রিয়াদে একটি বেসরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০-৭০ লাখ টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রিয়াদের বাসায় এই অভিযান হলেও এখনো পুলিশ অফিসিয়ালি কোন বক্তব্য দেয়নি। তবে পুলিশের সমর্থিত সূত্র, অভিযান এবং উপরের তথ্যের সতত্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর নিজের ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, অভিযানে রিয়াদের একটি বেসরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০-৭০ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
আলোচিত চাঁদাবাজ রিয়াদের বাসায় অভিযানে যা যা পাওয়া গেল শিরোনামে দেওয়া ওই ফেসবুক পোস্টে জাওয়াদ নির্ঝর লিখেছেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত পুলিশ রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় অভিযান চালায়। এ সময় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি চেকের সন্ধান পায় পুলিশ। আগামী মাসের ২ তারিখে ওই চেকটি ক্যাশ হওয়ার কথা ছিল।’
টাকার সূত্র উল্লেখ করে জাওয়াদ নির্ঝর বলেন, ‘গুলশানে আওয়ামীপন্থী এক ব্যবসায়ীর জমি উদ্ধারে ৫ কোটি টাকা চুক্তি হয়েছিল রিয়াদের সঙ্গে। সেই চুক্তির দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেনে চেক ছিল রিয়াদের ঘরে।’
এফডিআর ও ব্যাংক লেনদেন সম্পর্কে এই প্রবাসী সাংবাদিক জানিয়েছেন, পুলিশ তার ঘর থেকে অন্তত ১০টি এফডিআরের কাগজ পেয়েছে। যেগুলোতে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা করে রাখা আছে। গত কয়েক মাসে রিয়াদের একটি বেসরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০-৭০ লাখ টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রিয়াদের বাসায় এই অভিযান হলেও এখনো পুলিশ অফিশিয়ালি কোনো বক্তব্য দেয়নি।’
এর আগে ২৬ জুলাই রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাড়িতে চাঁদা আনতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাসহ পাঁচজন। ওই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। সিদ্দিক আবু জাফরের করা মামলায় রিয়াদ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- কাজী গৌরব অপু, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন ও আইনের সংঘাতে জড়িত শিশু আমিনুল ইসলাম।
এদিকে থানায় মামলা হলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। একইসঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে দশদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আরেকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে ওই চারজন পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেন।
অন্যদিকে সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে কোনোরকম সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০/১২ জন সমন্বয় পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই; এসময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকালে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এসময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরও ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
পরবর্তীতে আমি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করি। তাৎক্ষণিক পুলিশ আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। এসময় কাজী গৌরব অপু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।