কেপিআই স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ছে

home-minister-211025.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি স্থাপনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সারা দেশে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন–কেপিআই) নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।

১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায়, ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের সিইপিজেডে একটি কারখানায় এবং ১৮ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

গতকাল ২০ অক্টোবর সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় কেপিআইভুক্ত স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বলা হয়, কেপিআই এলাকায় পরিদর্শন বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত কমিটির সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয়, কেপিআই এলাকা সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাড়াতে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ করবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে এখন ৫৮৭টি কেপিআইভুক্ত স্থাপনা রয়েছে। সংসদ ভবন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বঙ্গভবন, সচিবালয়, মেট্রোরেল কেপিআইভুক্ত এলাকা। এসব স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য ২০১৩ সালে একটি নীতিমালা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যেখানে বলা হয়েছে, এসএসএফের (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সমন্বয়ে প্রতিটি বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের নিরাপত্তা কমিটি গঠিত হবে। নিরাপত্তা কমিটিতে এসএসএফের মহাপরিচালক বা তার উপযুক্ত প্রতিনিধি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, কেপিআই জরিপ কমিটি ছয় মাস পরপর বিশেষ শ্রেণির কেপিআই জরিপ করবে। তারা কেপিআই এলাকার নিরাপত্তার ত্রুটি চিহ্নিত করবে। তা দূর করার জন্য এসএসএফের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের নিরাপত্তা কমিটিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পাঠাবে। তারা এ সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভায় আলোচনা হয়, বিশেষ শ্রেণিভুক্ত স্থাপনা বছরে দুবার করে জরিপের যে নিয়ম রয়েছে, তা মানা হয় না। নিয়মিত জরিপ যাতে হয়, সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে সভায়। এ ছাড়া কেপিআইভুক্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ঢাকার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজসহ অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিমানবন্দরের আগুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনিকে সভাপতি করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কোর কমিটির সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আগুন লাগার ঘটনায় তদন্তের আগে কিছু বলা যাবে না। এ সময় তিনি প্রবাসী শ্রমিক তথা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানোর কথা জানান। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তাদের (প্রবাসী শ্রমিক) রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলি। তবে তারা যে সম্মান পাওয়ার দরকার, অনেক জায়গায় সে সম্মান পায় না। ভালো সেবা পায় না। তাদের পাসপোর্ট ফি কমিয়ে দেওয়া হবে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রবাসীরা অর্থনীতির প্রাণ। তাঁদের জন্য পাসপোর্ট ফি যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসীরা সাধারণত বাংলাদেশ বিমানে আসা-যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেননা বিমানে তাঁদের ভাষা বুঝতে সহজ হয় ও দেশি খাবার খেতে পারেন। সে জন্য বিমানের সার্ভিসের মান বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

নির্বাচন নিয়ে সংশয় বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই, তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা আগে কখনো ছিল না। তা ছাড়া গত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের এ নির্বাচনে যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top