অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
মিরাজ মৃত্তিক ।।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তিন দিন দেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন সরকার ছিলো না। পরে ছাত্রজনতার দাবির প্রেক্ষিতে গত বছরের আজকের দিনে ৮ আগস্ট ড. ইউনূস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ড. ইউনূস এর ক্ষমতা গ্রহণের আজ ৮ আগস্ট ১ বৎসর পূর্ণ হলো।
এরপর দেশের মানুষের আকাশচূম্বি প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির বিশাল ব্যবধান। চলেছে সংস্কারের অনেক চেষ্টা। বহুবার বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক টানা হেছড়ায় সেই সংস্কার প্রক্রিয়া খুব বেশি এগিয়েছে এমন দাবিরও সুযোগ নেই। তবে কিছুটা হয়েছে। অনেক ভালো পরামর্শ এসেছে। তবে এর সব কিছুই নির্ভর করছে আগামী দিনে যারা দেশের শাসনের সুযোগ পাবেন তাদের মর্জির উপর।
আওয়ামী দূঃশাসনের ফলে শেখ হাসিনার পতন এই জাতির জন্য অনেকটাই জরুরী ছিলো। সারাদেশে যেভাবে আওয়ামী রাজনৈতিক সন্ত্রাস, নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, ব্যাংক বীমাসহ রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে দুর্নীতির মহাৎসব চলছিলো, দলীয় করণ, দলীয় মাস্তানী-বাটপারি-হয়রানী জুলুম দূর্নীতির পাহাড় হচ্ছিলো দেশের সর্বক্ষেত্রে। তার অবশান জরুরি হয়ে উঠেছিলো।
তবে ড. ইউনূস সরকারের এক বছরের মাথায় এসে খুব জোর দিয়ে বলা যাবে না এই সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কিছু তো সফল হয়েছেন, বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রন হয়েছে, মজুদদার সিন্ডিকেট নেই, আগের সরকারেে সময়ে হাতে গনা কয়েকটা বড় দূর্নীতিবাজ গ্রুপ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো এখন করতে পারতেছে না। প্রতিযোগিতা মূলক আমদানী রপ্তানী কারন সৃস্টি হয়েছে,শেখ হাসিনার আমলে বৈদেশিক মুদ্রা লুটকরে পাছার হতো, সেটা শেষ হয়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে, ব্যাংকগুলো অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
অতিতে বাংলাদেশ ভারত, রাশিয়া, চীন নির্ভর একটা দেশ ছিল। এখন সেটার বিপরীতে বাংলাদেশ আমেরিকা, চীন, পাকিস্তানের দিকে ঝুকেছে। তবে ভারতের সাথে হাসিনার করা আদানীর চুক্তি বাতিল হয়নি। বরং ড. ইউনূসের সরকারও ভারতের সাথে নমনীয় বৈদেশিক অবস্থানে ছিলো আছে। হয়ত আগামীতে নতুন সরকারও সাথে ভারত সাথে এই নমনিয়তা বজায় সম্পর্ক রাখবে।
তবে ড. ইউনূসের সরকার রাষ্ট্রের আইনশৃংক্ষলা নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ, মবে মগের মুল্লুক বাংলাদেশ, নিরব চাঁদাবাজি চলছে, প্রকাশ্যে মানুষ খুন হচ্ছে। এখনও হত্যাকান্ড চলমান, মিথ্যা মামলা আগের তুলনায় বেড়েছে, এসব কথা হয়ত সত্য। তবে এই দেশের মানুষ খারাপ হতে পারে সহজে, ভালো হতে পারে না। অনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক চাপ ইউনূস সরকারক বাঁধাগ্রস্ত করেছে বহু ক্ষেত্রেই।
অতিতে মানুষ দেখেছে খারাপ হলে অল্পদিন দিনে ধনী হতে পারে, ভালো হলে তাহা পারে না। এতো রক্তের পরেও রাজনৈতক নেতা কর্মীরা অতিতের পথেই হাটার চেষ্টা করেছে। অনেকে আকাম কুকামসহ সুবিদা নেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছায়, আবার অনেকে চাপে পড়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিেকে চাঁদা দিচ্ছেন। এখানে দুই পক্ষের দোষ আছে।
দেশের পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী খুব কঠোর হচ্ছে না। তদের চোখের সামনে মব চলছে। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী চলমান এসবের বিরুদ্ধে কঠোর না হওয়ার কারনও হয়ত আছে। এখন বেশি কঠোর হলে আগামীর সরকারের কাছে সমস্যায় পড়তে পারে। অনেকটা সেই কারনেই নিরব ভূমিকা দেখাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ।
অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত বলছে আমরা তো ক্ষমতাই নাই,সরকার অপরাধীদের ধরুক, তাতে আমাদের আপত্তি নাই, তারাও রাস্তা পরিস্কার রাখছে জনগণের কাছে। দল হিসাবে তারা কিছু এ্যাকশানে যাচ্ছে এটা কিছুটা ঠিক, তা হয়ত ঘটনার তুলনায় ১০/১৫ ভাগ হবে।
আবার পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনী বলছে হত্যাকান্ডের বিচার করবে আদালত, আমরাতো অপরাধী ধরছি, পুলিশ এইক্ষেত্রে ১০০% সফল, তাদের কাজ অপরাধীকে ধরা, কারাগারে পাঠানো, আদালতের কাজ বিচার করা, দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে হলে তিনটা পক্ষ একমত হতে হবে,রাজনৈতিক দল,পুলিশ ও বিচার বিভাগ,তাহলে দীর্ঘমেয়াদে দেশে অপরাধ কমবে।
পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে স্বাধীনভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে কাজ করতে দিতে হবে। রাজনৈতিক দল যদি বলে আমাদের দলের নেতা কর্মি সমর্থক হলে সব অপরাধ মাপ, তাহলে এই দেশে আইনের শাসন কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে না। আওয়াম আমলের সকল অপরাধ রাজনৈতিক খোলস পাল্টিয়ে এখনো শতভাগ চলমান। বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে। কোথাও কোথাও দ্বিগুন হয়েছে।
আগামী সরকারের দায়িত্ব হবে এসব অপরাধ প্রবনতা শতভাগ নির্মূল করি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মানসিকতা নিয়ে ভাবা, মানুষ হত্যা যেন সহজ না হয়, একটা রাষ্টে যখন অপরাধীর বিচার হয়না তখন অপরাধ বাড়তে থাকে,কারন কঠোর বিচার না হওয়াতে অন্যেরা অপরাধ করতে ভয় পায় না। এটাই সহজ ও সঠিক কথা,সব কিছুতেই দলীয় দৃস্টিতে দেখলে হবে না,শেখ হাসিনার অধঃপতন ও পালিয়ে যাওয়ার কারন কিন্তু এটাই ছিলো।
ড. ইউনূসের সরকার অস্থায়ী, তিনি হয়ত ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে বিদায় নিবেন। উনার সংস্কার নির্ভর করে আগামী সরকারের মন-মনাসিকতা ও দলীয় নীতির উপর। আসছে সরকার, দল ও দলের নেতা কর্মিরা যদি সৎ চিন্তা করতে পারে তবে দেশে ভালো কিছু হতে পারে। না হয় চরম ভূল করবে আগামীর সরকার। না হয় ১৯৭১, ২০০৮ বা ২০২৪ মতো পলায়নের দৃশ্য আবারো দেখতে হতে পারে বাঙালি জাতিকে।
আগামীতে বিএনপি জামায়াত ও এনসিপির দলীয় নেতরা যদি দেশটা ভালোভাবে চালাতে ব্যর্থ হয় তাহলে হাসিনার জন্য রাস্তা হবে পরিস্কার,আর ওনাদের জন্য হবে অন্ধকার। এটা মাথায় রাখলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে সুন্দর ও চমৎকার এবং বাসযোগ্য। আমরা অপেক্ষায় একটা সুন্দর বাসযোগ্য আগামীর বাংলাদেশের………..।