বিশেষ প্রতিবেদক ।।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরিভাবে বৈধ হলেও এটি কার্যত অনিরাপদ এলাকায় অবস্থিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ার মধ্যে পড়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এমন রিস্ক জোন অবস্থানে থেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ গণজমায়েত হয়, এমন সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
২৫ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর বাংলামটরে বিআইপির কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের রানওয়ের পরবর্তী ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। এরপরের ১৩ হাজার ফুট, অর্থাৎ প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা ‘অ্যাপ্রোচ এরিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে বিমান ওঠানামা করে।
তামজিদুল ইসলাম জানান, অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় কারিগরি দিক থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার ভবন নির্মাণে আপাতত বাধা না থাকলেও এসব স্থাপনার ব্যবহার কী হবে, সে বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে জনজমায়েত হয় এমন স্থাপনা নির্মাণের কারণে এখানে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-এ অ্যাপ্রোচ এলাকার ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। এই এলাকায় কৃষিজমি, সবুজায়ন ইত্যাদি রাখা যেতে পারে; তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে পাখির সমাগম বাড়ে বা জনসমাগম ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো গণজমায়েত হয়— এমন স্থাপনাগুলো সরাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে।” তিনি বলেন, “বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জায়গা ঘিরে যত ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে উচ্চতা ব্যত্যয় হয়েছে, সেসব স্থাপনার অতিরিক্ত অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।”
আদিল খান আরও বলেন, “আগে বিমানবন্দর ছিল শহরের বাইরে, কিন্তু এখন ঢাকাই বিমানবন্দরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। না হলে বিমানবন্দরের উড্ডয়নপথের ঠিক পাশে স্কুল-কলেজ হওয়ার কথা নয়।”
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ শাহরিয়ার আমিন, কোষাধ্যক্ষ ড. মোসলেহ উদ্দীন হাসান এবং বোর্ড সদস্য আবু নাঈম সোহাগ প্রমুখ।